আপনি কি জানেন, জীবনের বহু অপ্রত্যাশিত দুর্ভাগ্য, অর্থহানি, সম্পর্কের ভাঙন, কিংবা মানসিক অস্থিরতার মূল কারণ অনেক সময় শনিদেবের সাড়েসাতি?
আরও আশ্চর্যের বিষয় হল — আপনার পরা সোনার গয়নাই হয়তো শনিদেবের রোষ বাড়িয়ে দিচ্ছে!
প্রাচীন বৃহৎ জাতক, লগ্নরহস্য এবং বৃদ্ধযামল তন্ত্র বলছে, শনির সাড়েসাতি কালে সোনা পরা এক ভয়ঙ্কর ভুল, যা অজান্তেই জীবনে দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে।
এমনকি পুরাণ মতে, শনি ও সূর্যদেবের মধ্যেকার দ্বন্দ্বই এই গোপন রহস্যের মূল। সোনা সূর্যের ধাতু, আর লোহা শনির।
যখন আপনি শনির দোষকালে সূর্যের শক্তি গায়ে ধারণ করেন, তখন দুই বিপরীত শক্তির সংঘাত আপনার ভাগ্যের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
এটাই সেই প্রাচীন গোপন রহস্য, যা আজও অল্প কয়েকজন তান্ত্রিক ও জ্যোতিষাচার্য জানেন।
শনির সাড়েসাতি: কেন এত ভয়ঙ্কর?
শনি হলেন কর্মফল দাতা। তিনি ন্যায়পরায়ণ, কিন্তু নির্মম।
আপনার পূর্বজন্মের কর্ম, অপকর্ম, এবং অবহেলিত কর্তব্য — সবকিছুর ফল হিসেব করে নেন শনি।
শনি ধীরগতির গ্রহ; প্রত্যেক রাশিতে প্রায় ২ বছর ৬ মাস অবস্থান করেন।
চন্দ্র রাশির দ্বাদশে, চন্দ্র রাশিতে এবং চন্দ্র রাশির দ্বিতীয় ঘরে শনি অবস্থান করলে যে ৭ বছর ৬ মাসের সময়কাল তৈরি হয়, সেটিই সাড়েসাতি।
এই সময়ে কারও কাছে শনিদেব আশীর্বাদ নিয়ে আসেন, কর্মফল প্রদান করেন — আবার কারও কাছে নিয়ে আসেন কঠিন পরীক্ষা।
কারও কর্মফল শুভ হলে উন্নতির শিখর, আর কারও জন্য ভাগ্যের চরম পতন।
মীন রাশির জন্য সাড়েসাতির অগ্নিপরীক্ষা
২৯ মার্চ ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে মীন রাশির সাড়েসাতি দশা।
এই দুর্দান্ত গ্রহপরিবর্তন চলবে ২ জুন ২০২৭ পর্যন্ত।
এই সময়ে কিছু মীন রাশির জাতক দারুণ উন্নতির শিখরে পৌঁছবেন, কিন্তু কিছু সংখ্যক মানুষকে শনিদেবের কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
এই সময়ে সোনা পরা মীন রাশির জন্য বিশেষভাবে অশুভ।
কারণ সোনার প্রভাবে শনির শক্তি ভারসাম্য হারায়, আর তখন জীবনে তৈরি হয় হঠাৎ সমস্যা, অর্থক্ষতি, রোগশোক, মানসিক ভাঙন, এবং সম্পর্কের অশান্তি।
শনি ও সূর্যের গোপন দ্বন্দ্ব
পুরাণ মতে, শনিদেব সূর্যদেবের পুত্র, কিন্তু পিতা-পুত্রের মধ্যে সম্পর্ক আদৌ সুসম্পর্কপূর্ণ ছিল না।
শনি হলেন তামসিক, গভীর, ধীর, কর্মনিষ্ঠ — আর সূর্য হলেন তেজস্বী, অহংকারী ও দীপ্তিমান।
শনি ও সূর্য শক্তির সংঘাত ঘটে যখন সোনার মতো সূর্যের ধাতু শনির অশুভ সময়ে শরীরে ধারণ করা হয়।
ফলাফল:
- ভাগ্যের ভারসাম্য ভেঙে পড়ে
- শারীরিক ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়
- অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়
- পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে দ্বন্দ্ব বাড়ে
তাই প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্র ও তন্ত্রগ্রন্থে এক সুরে সতর্কবার্তা:
“শনির সাড়েসাতি কালে সোনা ধারণ করলে বিপদ নিশ্চিত।”
শনির সাড়েসাতি চলাকালীন সোনা পরা কেন অশুভ
- সূর্য বনাম শনি সংঘাত → সোনা সূর্যের ধাতু, যা শনির শক্তিকে বিপরীত করে দেয়।
- শক্তির ভারসাম্য নষ্ট → সোনা শনির গতি ও কর্মফলকে বাধাগ্রস্ত করে, ফলে অপ্রত্যাশিত দুর্ভাগ্য তৈরি হয়।
- রাহু-কেতুর বাড়বাড়ন্ত → সোনা রাহু-কেতুর শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়, যা সাড়েসাতির অশুভ প্রভাব বহুগুণে বৃদ্ধি করে।
তাহলে কী পরবেন? শনির আশীর্বাদের গোপন চাবিকাঠি
প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, শনির ধাতু হল লোহা।
তাই শনির সাড়েসাতি চলাকালে লোহার আংটি, লোহার নখ বা কালো ঘোড়ার নাল পরা শুভ।
শনির আশীর্বাদ পাওয়ার উপায়
- লোহার আংটি – শনির দোষ কমাতে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিকার।
- নেভি ব্লু বা কালো রঙের পোশাক – শনিদেবকে শান্ত রাখে।
- কালো তিল, উড়দ ডাল ও লোহার দান – সাড়েসাতির অশুভ প্রভাব হ্রাস করে।
-
শনিদেব মন্ত্রজপ →
“ওঁ প্রাঁ প্রীং প্রৌং শনেিশ্চরায় নমঃ”
গ্রহণ বা শনির দোষকালে ১০৮ বার জপ করলে শনির শক্তি প্রশমিত হয়।
কারা সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকবেন
এই মুহূর্তে শনির সাড়েসাতি বা অষ্টম শনি চলছে মূলতঃ এই রাশিগুলির উপর:
- মীন রাশি → সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত
- কুম্ভ রাশি → সাড়েসাতির শেষ পর্যায়
- মকর রাশি → সাড়েসাতির মধ্য পর্যায়
- কর্কট ও সিংহ রাশি → অষ্টম শনি দোষে জর্জরিত
এই রাশির জাতকদের জন্য সোনা পুরোপুরি এড়িয়ে চলা অপরিহার্য।
শ্রী জয়দেব শাস্ত্রীর বিশেষ তান্ত্রিক টিপস (গোপন প্রতিকার)
- শনির সাড়েসাতির সময় প্রতি শনিবার কালো তিল, কালো কাপড় এবং লোহার টুকরো শ্মশান বা প্রবাহমান জলে দান করুন।
- শনিবার সকালে পিপল গাছের নিচে সরষের তেলে প্রদীপ জ্বালিয়ে “ওঁ শং শনৈশ্চরায় নমঃ” ২১ বার জপ করুন।
- শনিদেবের ক্রোধ প্রশমিত করতে শনিবারে শিবলিঙ্গে দুধ ও কালো তিল দিয়ে অভিষেক করুন।
শনি কখনও কারও অকারণে ক্ষতি করেন না।
তিনি কেবল কর্মফল প্রদানকারী।
কিন্তু যদি সাড়েসাতি চলাকালে আপনি ভুল করেন — যেমন সোনা পরা, রাহু-কেতুর শক্তি বৃদ্ধি করা বা তন্ত্রীয় নিয়ম অমান্য করা — তবে শনির দণ্ড অবধারিত।
সুতরাং, এই সময় শনির নিয়ম মেনে চলা, লোহা ধারণ করা, দান-ধ্যান করা এবং মন্ত্রজপই আপনার জীবনে শনিদেবের আশীর্বাদ ফিরিয়ে আনতে পারে।