শনি — সেই গ্রহ, যাকে ন’গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর বিচারক বলা হয়। কারও জীবনে তিনি আশীর্বাদ হয়ে আসেন, আবার কারও জীবনে অভিশাপ। কারও সাফল্যের সিঁড়ি তৈরি করেন, আবার কারও সাম্রাজ্য ধুলিসাৎ করে দেন।
এই নভেম্বরের শেষ শুক্রবার, সেই বিচারকের দিকেই তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব।
কারণ, ২৮ নভেম্বর শনি তাঁর দীর্ঘ বক্রগতি ত্যাগ করে আবার মার্গী গতি (অর্থাৎ সোজা গতি) প্রাপ্ত হবেন। শনি বর্তমানে মীন রাশিতে অবস্থান করছেন। পুজোর আগেই যখন তিনি বক্রী হয়েছিলেন, তখন বহু মানুষের জীবনে একের পর এক অস্থিরতা, মানসিক চাপ, আর্থিক সংকট, সম্পর্কের ভাঙন ও স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
এখন প্রশ্ন — সোজা পথে ফেরার পর কী হবে?
সব ঠিক হয়ে যাবে?
নাকি শুরু হবে অন্য এক খেলা — আরও গভীর, আরও কর্মফলনির্ভর?
জ্যোতিষ মতে, শনির সোজা গতি মানে শান্তি নয়, বরং “চূড়ান্ত বিচারকাল”। বক্রগতি চলাকালীন তিনি পর্যবেক্ষণ করেন — আর মার্গী গতি প্রাপ্তির পর তিনি ফল প্রদান করেন। যিনি সৎ ছিলেন, তিনি পুরস্কার পাবেন। আর যিনি অন্যায় করেছেন, তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে শনি-দণ্ড!
তবে এই পরিবর্তনের ফলে চারটি রাশি বিশেষভাবে শনির আশীর্বাদে ধন্য হতে চলেছেন। কিন্তু মনে রাখবেন — শনির আশীর্বাদও কঠোর শর্তে মেলে। সামান্য ভুলে আশীর্বাদ অভিশাপে পরিণত হতে সময় লাগে না!
♈ মেষ রাশি — “অন্ধকার ভেদ করে আলো”
মেষ রাশির জীবনে যেন হঠাৎ সূর্যের আলো ফুটবে। এতদিন আটকে থাকা কাজগুলো একে একে সম্পূর্ণ হবে। অর্থপ্রাপ্তির যোগ প্রবল। দীর্ঘদিনের দেনা শোধের সুযোগও আসবে।
তবে এক সতর্কবার্তা — রাগ ও আবেগ শনির কাছে অমার্জনীয় পাপ।
যদি নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে যত সুফল আসছে, তা মুহূর্তে উলটে যেতে পারে।
শনির দৃষ্টি এখন আপনার কর্মক্ষেত্রে। তাই সততা ও ধৈর্য রাখুন। যত ঠান্ডা মাথায় চলবেন, ততই সফলতা বাড়বে।
♊ মিথুন রাশি — “বিচ্ছেদ নয়, পুনর্মিলনের সময়”
মিথুন রাশির জীবনে শনি আনতে চলেছেন সম্পর্কের পুনর্জন্ম।
যাঁদের সম্পর্কে মনোমালিন্য বা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তাঁরা নতুন করে সম্পর্কের অর্থ বুঝতে পারবেন।
বিবাহিত জীবনে শান্তি আসবে, প্রেমে নতুন আশা জাগবে।
পেশার ক্ষেত্রে বড় সুযোগ আসবে — পদোন্নতির সম্ভাবনা জোরালো।
কিন্তু ভুলে যাবেন না — শনি ধীরগতির গ্রহ, তাই ফল পেতে ধৈর্য ধরতেই হবে।
অস্থিরতা দেখালে সব হারাবেন। তাই সময় দিন, নীরবে কাজ করুন, ফল আসবেই।
♐ ধনু রাশি — “স্বাস্থ্য ও সংসারে মুক্তির আলো”
ধনু রাশির জাতকদের জীবনে শনির আশীর্বাদে আসছে স্বস্তি।
অনেকদিন ধরে যাঁরা শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন, তাঁরা এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
পারিবারিক কলহ কমবে, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে দূরত্ব মিটবে।
কিন্তু শনির কৃপা পেতে হলে আত্মনিয়ন্ত্রণ আবশ্যক।
মাথা গরম করলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
এই সময় ন্যায়পথে থাকুন, কারও প্রতি অন্যায় করলে শনি তা ক্ষমা করবেন না।
♓ মীন রাশি — “সাড়ে সাতির ছায়া হালকা হলেও, পরীক্ষা শেষ নয়”
বর্তমানে শনি মীন রাশিতেই অবস্থান করছেন।
এই রাশির জাতকেরা এখন সাড়ে সাতির গভীর প্রভাবে রয়েছেন।
বক্রী শনির সময় তাঁদের উপর চাপ, হতাশা, মানসিক অস্থিরতা, কাজের ব্যাঘাত বেড়ে গিয়েছিল।
এখন শনি সোজা পথে ফিরলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে, কিন্তু মনে রাখবেন — এটা কেবল বিরতির সময়, সমাপ্তি নয়।
শনির দৃষ্টি এখন পুরোপুরি আপনার জীবনের প্রতিটি দিক পর্যালোচনা করছে।
যাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের জন্য শনি দেব অপ্রত্যাশিত সম্মান ও উন্নতির দ্বার খুলে দেবেন।
কাজের জায়গায় সুনাম বাড়বে, সমাজে প্রতিপত্তি আসবে।
আর প্রেমের ক্ষেত্রে এই সময় আপনি কারও মন জয় করতে পারেন — কিন্তু তা করতে হবে সততা ও সংযমের সঙ্গে।
⚠️ সামগ্রিকভাবে সতর্কবার্তা:
শনির এই গতি পরিবর্তন মহাজাগতিক ভারসাম্য পুনর্গঠনের সময়।
যাঁদের জন্মকুণ্ডলীতে শনি দুর্বল বা পাপগ্রহদের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের জন্য সময়টা অস্বস্তিকর হতে পারে।
অযথা ঝুঁকি নেওয়া, অন্যায়ের পথে চলা বা অহংকার করা — এই সময় ভয়ঙ্কর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
🕯️ উপায়:
শনির কৃপা পেতে শনিবারে কালো তিল ও তেল দান করুন, ভগবান শনি বা হনুমানজির পূজা করুন, এবং সর্বোপরি নিজের কর্মে সততা বজায় রাখুন।
📜 জ্যোতিষীদের মতে:
“শনি কখনও কারও শত্রু নন — তিনি কেবল কর্মফল প্রদান করেন।
যদি আপনি সৎ পথে চলেন, তবে শনি আপনার জীবনে বিচারক নয়, বরং রাজযোগের স্রষ্টা হবেন।”