লুন্ঠন ষষ্ঠী ব্রত: সন্তানের মঙ্গল ও সংসারের সমৃদ্ধির জন্য এক লৌকিক তিথির পৌরাণিক ব্যাখ্যা
✍️ Asian Top 10 Astrologer Sri Joydeb Sastri
🌿 এক বিশেষ তিথির গোপন রহস্য ও তার আচার-আচরণ, আহার বিধি, এবং পেছনের পৌরাণিক ইতিহাস
লুন্ঠন ষষ্ঠী কী ও কবে পালিত হয়?
প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালিত হয় লুন্ঠন বা লোটন ষষ্ঠী ব্রত। ২০২৫ সালে এটি পালিত হচ্ছে ৩০শে জুলাই, বুধবার। বাঙালির সংস্কৃতিতে বারো মাসে তেরো ব্রতের মধ্যে অন্যতম এই ব্রত, যা মূলত সন্তানের মঙ্গল, রোগমুক্তি এবং দীর্ঘায়ু কামনায় মায়েরা পালন করে থাকেন।
“লুন্ঠন” শব্দের অর্থ লুঠ করা, আবার এর আরেকটি অর্থ লুটিয়ে পড়া বা দেহের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যাওয়া। এই দুটি অর্থই এই ব্রতের সঙ্গে যুক্ত, কারণ এটি সন্তানদের অকাল মৃত্যু, হঠাৎ পড়ে গিয়ে চোট পাওয়া কিংবা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার প্রতীকরূপে প্রচলিত।
🕉️ পৌরাণিক কাহিনী: কেন এই ব্রতের জন্ম?
এই ব্রতের পিছনে রয়েছে এক শক্তিশালী মাতৃতান্ত্রিক পৌরাণিক কাহিনী। কথিত আছে, একসময় পৃথিবীতে এমন এক দানবের আবির্ভাব হয়েছিল যে শিশুদের জন্মের পর পরই লুঠ করে নিয়ে যেত এবং তাদের প্রাণনাশ করত। তখন দেবতারা গিয়ে মা ষষ্ঠীর দ্বারে প্রার্থনা করেন সন্তানদের রক্ষা করার জন্য।
মা ষষ্ঠী তখন ব্রতের মাধ্যমে মায়েদের ক্ষমতা জাগ্রত করতে বলেন। তিনি বলেন:
“যে মা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ত্যাগ এবং ব্রতের মাধ্যমে সন্তানের কল্যাণের প্রার্থনা করবে, তার সন্তান আমার আশীর্বাদে অক্ষত থাকবে।”
সেই থেকেই এই ব্রত চালু হয়, এবং মায়েরা সন্তানের দেহে চুল দিয়ে নাড়ু পরিষ্কার করে পুনরায় উঠিয়ে রাখা প্রথাটি পালন করেন, যা সন্তান রক্ষার প্রতীক।
🔮 ব্রতের নিয়ম ও আচার আচরণ
যাঁরা ব্রত পালন করেন তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু রীতিনীতি পালন আবশ্যক। যেমন:
- ব্রতের দিন সকালে ৭টি বা ৯টি নাড়ু তৈরি করে তাতে গোবর মেখে মাটিতে ফেলে দিতে হয়।
- এরপর মাথার চুল বা আঁচল দিয়ে সেই নাড়ুগুলি মুছে পুনরায় উঠিয়ে রাখা হয়।
- এই কাজটি সন্তানের প্রতি মায়ের যত্ন, শুচিতা ও আত্মত্যাগের প্রতীক।
এছাড়াও, বহু অঞ্চলে গোবরের গুলিতে করে একটি প্রতীকী সন্তান বানানো হয় এবং সেটিকে পিঠে বেঁধে "লুন্ঠন" বা "লুটিয়ে পড়া" ভঙ্গিতে প্রদক্ষিণ করা হয়। এটি মূলত সন্তানের জীবনযুদ্ধের প্রতীক, যাতে মা সর্বদা পাশে থাকে।
🍽️ আহারবিধি ও নিষেধ
এই ব্রতের দিন বিশেষভাবে খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক।
যা খাওয়া যাবে না:
- চালের তৈরি খাবার, ভাত, রুটি, ডাল (বিশেষত মুসুর), পেঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি (যেমন পুঁই, কলমি) খাওয়া নিষেধ।
- আমিষ খাবার ও নেশাজাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
যা খাওয়া যাবে:
- দিনের বেলা লুচি গ্রহণযোগ্য, তবে সান্ধ্যভোজে শুধুই ফল ও মিষ্টি খাওয়াই শ্রেয়।
- ডাবের জল পান করা যেতে পারে ব্রতভঙ্গের সময়।
- আতপ চাল, আখের গুড়, ক্ষীরের নাড়ু, গুড়ের পিঠে, ডাব, ফল, ঘি ইত্যাদি নৈবেদ্য হিসেবে অর্ঘ্য দেওয়া হয়।
🌟 আচার পালনের গোপন তান্ত্রিক ও জ্যোতিষ ব্যাখ্যা
এই ব্রতের জ্যোতিষ সংযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ষষ্ঠী তিথি মূলত শুক্ল ষষ্ঠী, যা ষষ্ঠী দেবীর শক্তিশালী তিথি। এই সময়ে চন্দ্র ও শুক্র গ্রহের প্রভাব অত্যন্ত তীব্র থাকে। মায়েদের প্রার্থনায় এই দুই গ্রহের শুভ প্রভাব সন্তানদের জীবনে শান্তি, সুরক্ষা ও সুস্বাস্থ্য দেয়।
তন্ত্র মতে, চুল দিয়ে মাটি থেকে ব্রতের প্রতীক উঠিয়ে আনা মানে হচ্ছে নিজের তপস্যার দ্বারা সন্তানকে মৃত্যুর করাল গ্রাস থেকে ফিরিয়ে আনা।
💠 লোকবিশ্বাস ও বাস্তব ফল
বিশ্বাস করা হয়, সঠিকভাবে লুন্ঠন ষষ্ঠী পালন করলে:
- সন্তানদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- অকাল মৃত্যু বা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- সংসারে সুখ, শান্তি, অভাবমুক্তি এবং ধনসম্পদের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
অনেক মা বলেন, সন্তান জন্মের পর তারা যখন দুর্বল ও অসুস্থ ছিল, তখন এই ব্রত পালন করে সন্তানের জীবনে অলৌকিক উন্নতি এনেছেন।
লুন্ঠন ষষ্ঠী শুধুমাত্র একটি ব্রত নয়, এটি মাতৃত্বের শক্তি ও আত্মত্যাগের চিরন্তন প্রতীক। আজকের যুগে যখন আধুনিকতা আমাদের শিকড় ভুলিয়ে দিচ্ছে, তখন এই ধরনের ব্রত আমাদের শিখিয়ে দেয় কিভাবে একটি মায়ের নিরব ভালোবাসা সন্তানের রক্ষাকবচ হয়ে উঠতে পারে।
🔔 আপনার সন্তানের মঙ্গল কামনায় লুন্ঠন ষষ্ঠী পালন করুন নিয়ম মেনে।
📲 নিয়ম জানুন, টোটকা ও রেমেডি পেতে ফলো করুন আমাদের পেজ –
JD Astro Consultancy and Academy
Call: 9831498860 | 9831498861 | 9903609484