ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে পালিত আজা একাদশী হিন্দু ধর্মে এক অনন্য তিথি।
আজা একাদশী হিন্দুধর্মে অন্যতম পবিত্র ও ফলদায়ক উপবাসের দিন। প্রতি বছর ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে এই বিশেষ ব্রত পালিত হয়। এই দিনটি ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে উৎসর্গ করা হয় এবং ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, সঠিক বেদীয় পদ্ধতিতে আজা একাদশীর ব্রত পালন করলে সকল পাপ নাশ হয়, সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়, এবং মোক্ষলাভ ঘটে।
“আজা” শব্দের অর্থ “অজন্মা” বা “যিনি জন্মমৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত”। তাই এই একাদশীকে আত্মার শুদ্ধিকরণ, আধ্যাত্মিক পুনর্জন্ম ও দিব্য জাগরণের দিন বলা হয়।
আজা একাদশী ২০২৫: তারিখ ও শুভ মুহূর্ত
বিশেষত্ব | তারিখ ও সময় |
---|---|
একাদশী তিথি শুরু | ১৮ আগস্ট ২০২৫, সন্ধ্যা ৫:০৪ মিনিট |
একাদশী তিথি শেষ | ১৯ আগস্ট ২০২৫, দুপুর ২:৪৪ মিনিট |
উপবাস পালনের তারিখ | ১৯ আগস্ট ২০২৫ |
পরাণ (উপবাস ভঙ্গ) সময় | ২০ আগস্ট ২০২৫, ভোর ৫:৫২ থেকে সকাল ৮:২৯ পর্যন্ত |
পরাণের সময়কাল | ২ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট |
আজা একাদশীর মাহাত্ম্য ✨
ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী, আজা একাদশীর দিনে শ্রীবিষ্ণুর উপবাস ও পূজা করলে অতীত জন্মের পাপ ধ্বংস হয়। ভক্তিভরে পালন করলে পারিবারিক সুখ, আর্থিক উন্নতি, রোগমুক্তি এবং আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ হয়।
এছাড়া, এই দিনটির সঙ্গে রাজা হরিশচন্দ্রের কাহিনি গভীরভাবে জড়িত, যা আজা একাদশীর মাহাত্ম্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
রাজা হরিশচন্দ্র ও আজা একাদশীর কাহিনি 🪔
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, সত্যপরায়ণ ও ধর্মনিষ্ঠ রাজা হরিশচন্দ্র একসময় নিজের রাজ্য, স্ত্রী, ও সন্তান হারিয়ে চণ্ডালের শ্মশানে কাজ করতে বাধ্য হন। জীবনে চরম দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে।
একদিন মহার্ষি গৌতম তাঁর দুরবস্থা দেখে তাঁকে উপদেশ দেন যে,
“হে রাজন, যদি তুমি ভাদ্রপদ কৃষ্ণপক্ষের আজা একাদশী ব্রত পালন কর, তবে সমস্ত পাপ মোচন হবে এবং জীবনে পুনরায় সুখ ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে।”
রাজা সেই ব্রত দৃঢ় নিষ্ঠায় পালন করেন। ফলস্বরূপ,
- তাঁর পাপমোচন হয়
- রাজ্য, স্ত্রী ও সন্তান পুনরুদ্ধার করেন
- স্বর্গীয় দেবদূতরা তাঁকে দিবারথে স্বর্গলোকে নিয়ে যান।
এই কাহিনি প্রমাণ করে যে, আজা একাদশী শুধু পুণ্যলাভের নয়, দুর্দশা মোচন ও মুক্তির দিন।
আজা একাদশী ২০২৫: পূজা ও উপবাস পদ্ধতি 🕉️
ব্রতের আগের দিন (দশমী)
- সাদাসিধে ও সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করুন।
- সময়মতো ঘুমিয়ে পড়ুন ও ব্রতের সংকল্প নিন।
একাদশীর দিন
-
প্রাতঃকালে স্নান ও প্রার্থনা
গঙ্গাজল বা পরিষ্কার জলে স্নান করে শুদ্ধ পোশাক পরিধান করুন। -
শ্রীবিষ্ণুর পূজা
ঘরের পূজাস্থল পরিষ্কার করে শ্রীবিষ্ণুর মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন। -
পূজা সামগ্রী
তুলসী পাতা, চন্দন, হলুদ ফুল, ধূপ, প্রদীপ, ফল ও পঞ্চামৃত নিবেদন করুন। -
মন্ত্র জপ
“ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়” মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে পাপ মোচন হয়। -
ভক্তিগীতি ও পাঠ
বিষ্ণু সহস্রনাম, ভগবদ্গীতা ও ভজন পাঠ করলে পুণ্য বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। -
অন্নগ্রহণ নিষিদ্ধ
শুধুমাত্র ফল, জল বা দুধ গ্রহণ করা যায়।
দ্বাদশীর দিন (উপবাস ভঙ্গ)
- সূর্যোদয়ের পর ব্রাহ্মণদের দান-দক্ষিণা দিন।
- তার পর নিজে উপবাস ভঙ্গ করুন।
আজা একাদশীতে করণীয় ও বর্জনীয় ✅❌
করণীয়
- ব্রহ্মমুহূর্তে গঙ্গাস্নান করা।
- তুলসী পাতা, পঞ্চামৃত ও হলুদ ফুল দিয়ে বিষ্ণুপূজা।
- দরিদ্রদের খাদ্য, বস্ত্র ও অর্থ দান।
- গীতা পাঠ, ভজন ও কীর্তনে অংশগ্রহণ।
বর্জনীয়
- একাদশীর দিনে চাল খাওয়া নিষিদ্ধ।
- পেঁয়াজ, রসুন, মদ্যপান ও আমিষ খাবার বর্জন করুন।
- অশ্লীল ভাষা, রাগ, মিথ্যা ও নিন্দা এড়িয়ে চলুন।
- একাদশীর দিনে তুলসীপাতা তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ।
আজা একাদশী ২০২৫-এর জ্যোতিষীয় প্রতিকার 🔮
সমস্যা | উপায় | ফলাফল |
---|---|---|
আর্থিক উন্নতি | বিষ্ণুকে হলুদ ফুল, তুলসী ও কেশর-খীর নিবেদন করে “ওঁ শ্রীম নমঃ” ১০৮ বার জপ। | ধনলাভ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি। |
পরিবারে শান্তি | ঘরে ঘৃত প্রদীপ জ্বালিয়ে ২১ বার “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়” জপ। | দাম্পত্য ও পারিবারিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি। |
মানসিক প্রশান্তি | ভোরে স্নান শেষে নিরিবিলি স্থানে বসে “ওঁ নমো নারায়ণায়” ১০৮ বার জপ। | উদ্বেগ ও মানসিক চাপ দূর। |
সন্তান লাভ | সাদা মিষ্টি নিবেদন করে স্বামী-স্ত্রী একসাথে বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ। | সন্তানের আশীর্বাদ লাভ। |
নজর ও অশুভ শক্তি দূর | দরজায় হলুদের স্বস্তিক আঁকুন, ঘৃত প্রদীপ জ্বালান ও লেবুর টোটকা প্রয়োগ করুন। | নেতিবাচক শক্তি থেকে সুরক্ষা। |
সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু | বিষ্ণু-লক্ষ্মীর পূজা করে ফল ও তুলসী নিবেদন। | রোগমুক্তি ও শক্তিবৃদ্ধি। |
ক্যারিয়ারে সাফল্য | পূজায় একটি রুপোর মুদ্রা লাল কাপড়ে মুড়ে মানিব্যাগে রাখুন। | চাকরি ও পদোন্নতিতে সহায়ক। |
আজা একাদশী ২০২৫ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উপবাস নয়, বরং এটি পাপমোচন, মুক্তি ও সমৃদ্ধির দিবস। সঠিক পূজা-পদ্ধতি, নিষ্ঠা ও দান-ধ্যান করলে জীবনে আধ্যাত্মিক জাগরণ, সৌভাগ্য এবং ঐশ্বর্য লাভ সম্ভব।