বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি আনার জন্য ৫টি সহজ বাস্তু টোটকা
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, আমাদের বসবাসের স্থান শুধুমাত্র একটি কাঠামো নয়, এটি আমাদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। সঠিক বাস্তু অনুসারে বাড়ি সাজালে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। বাস্তু দোষ থাকলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অশান্তি, আর্থিক সমস্যা ও মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ টোটকার কথা বলা হয়েছে, যা পালন করলে বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে।
১. ঈশান কোণ সবসময় পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখা
কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, ঈশান কোণ (উত্তর-পূর্ব দিক) সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এটি দেবতাদের বাসস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। এই স্থানে ভারী আসবাবপত্র বা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখলে তা নেতিবাচক শক্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং পরিবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
করণীয়:
- প্রতিদিন ঈশান কোণ পরিষ্কার করুন এবং জল দিয়ে মুছে নিন।
- এই কোণে পবিত্র গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিন।
- সেখানে একটি ছোট মন্দির স্থাপন করুন এবং প্রতিদিন প্রদীপ জ্বালান।
- অন্ধকার দূর করতে এই কোণে একটি উজ্জ্বল আলো রাখুন।
- হালকা রঙের পর্দা বা সজ্জা ব্যবহার করুন।
২. সকালে ভজন বা মন্ত্র উচ্চারণ করা
কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি বাড়িতে ভজন বা ঠাকুরের নামগান চালানো হয়, তবে তার কম্পন বাড়ির পরিবেশকে পবিত্র ও ইতিবাচক করে তোলে। এতে মানসিক প্রশান্তি আসে এবং পরিবারের মধ্যে ইতিবাচকতা বজায় থাকে।
করণীয়:
- সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে ভজন বা মন্ত্র উচ্চারণ করুন।
- শান্ত ও সুমধুর সঙ্গীত বা মন্ত্র বেছে নিন।
- বাড়ির মন্দিরে বা ঈশান কোণে বসে মন্ত্র জপ করুন।
- পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে গাওয়া আরও ফলপ্রসূ হতে পারে।
উপযুক্ত মন্ত্র:
- ওঁ নমো নারায়ণায়
- ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ
- ওঁ নমঃ শিবায়
- ওঁ অন্নপূর্ণায় নমঃ
৩. কাচের পাত্রে নুন রাখা
কেন গুরুত্বপূর্ণ?
নুন নেতিবাচক শক্তি শোষণ করে এবং বাড়ির পরিবেশকে শুদ্ধ রাখে। এটি বাস্তু দোষ নিবারণ করে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
করণীয়:
- একটি কাচের পাত্রে সামান্য নুন ভরে ঘরের কোণে রাখুন।
- প্রতি সপ্তাহে এই নুন পরিবর্তন করুন এবং পুরোনো নুন জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- বাথরুমে নুন রাখা বিশেষ উপকারী বলে মনে করা হয়।
- নুনের সঙ্গে পাঁচটি গোটা লবঙ্গ রাখতে পারেন, যা সম্পদ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৪. সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানো
কেন গুরুত্বপূর্ণ?
প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঠাকুরের সামনে এবং বাড়ির প্রধান দরজার সামনে প্রদীপ জ্বালানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এটি দেবতাদের আশীর্বাদ আনে এবং নেতিবাচক শক্তিকে দূর করে।
করণীয়:
- সূর্যাস্তের পরপরই প্রদীপ জ্বালান।
- ঘি বা সরষের তেল ব্যবহার করুন।
- প্রদীপ জ্বালানোর সময় নিম্নলিখিত মন্ত্র জপ করুন: ওঁ দীপম ज्योति परब्रह्म दीपं सर्वतमो नुदम्। दीपेन साध्यते सर्वं संध्यादीपं नमोस्तुते।।
- বাড়ির মূল দরজার দুই পাশে দুটি প্রদীপ রাখুন।
- যদি সম্ভব হয়, তুলসী গাছের সামনে একটি প্রদীপ রাখুন।
৫. রান্নার আগে স্নান ও মন্ত্র উচ্চারণ
কেন গুরুত্বপূর্ণ?
খাদ্যের পবিত্রতা ও শক্তি আমাদের শরীর ও মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। রান্নার আগে স্নান করা এবং বিশেষ মন্ত্র উচ্চারণ করলে বাড়ির সকল সদস্য সুস্থ ও আনন্দে থাকেন।
করণীয়:
- প্রতিদিন রান্নার আগে পরিষ্কার পোশাক পরিধান করুন।
- রান্নাঘরে প্রবেশের আগে তিনবার 'ওঁ অন্নপূর্ণায় নমঃ' মন্ত্র জপ করুন।
- রান্নার সময় ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং মনোযোগ সহকারে রান্না করুন।
- প্রথম রান্না করা রুটি বা খাবার গরু, কুকুর বা কাকের জন্য রেখে দিন, যা শুভফল প্রদান করে।
উপসংহার
উপরোক্ত পাঁচটি বাস্তু টোটকা দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করলে বাড়ির পরিবেশ ইতিবাচক ও শান্তিময় হয়ে ওঠে। বাস্তুদোষ দূর হয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুখ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। ছোট ছোট এই পরিবর্তনগুলিই আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে। তাই, আজ থেকেই এই বাস্তু টোটকাগুলি মেনে চলুন এবং দেখুন কীভাবে জীবনে পরিবর্তন আসে!