গাছ মানেই শান্তি? না কি ঘরে লুকিয়ে থাকা বাস্তুর ছদ্মবেশী সর্বনাশ?
বাড়ির শোভা, বিশুদ্ধ বায়ু এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য অনেকেই ঘরে গাছ রাখেন।
কিন্তু বাস্তুশাস্ত্র এবং তন্ত্রজ্যোতিষ বলছে, সব গাছই ঘরের জন্য শুভ নয়।
কিছু গাছ এমন রয়েছে, যা ঘরে রাখলে নেগেটিভ এনার্জি প্রবল হয়, জীবনে দেখা দেয় অশান্তি, দাম্পত্য কলহ, আর্থিক ক্ষতি এবং ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্যহীনতা।
আজ আমরা সেইসব ‘অলক্ষ্মীর বাহক’ গাছগুলি নিয়েই বিস্তারিত বলব, যেগুলি আপনিও হয়তো ঘরে রেখে আজীবন নিজের দুর্ভাগ্য নিজেই ডেকে এনেছেন — অথচ জানেনই না!
১. তেঁতুল গাছ — অলক্ষ্মী শক্তির আবাহন!
তেঁতুল গাছ হল বাস্তুর অন্যতম ভয়ানক নিষিদ্ধ গাছ।
তান্ত্রিক মতে, এই গাছের চারপাশে প্রেতাত্মা, ক্লেদ, এবং শোচনীয় শক্তি বাস করে।
কেন অশুভ?
- আর্থিক ক্ষতি ও ব্যবসায় ধস
- ঘরে একঘেয়ে বিষণ্ণ পরিবেশ
- পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব
- অকারণে মৃত্যু বা দুর্ঘটনার প্রবণতা
টোটকা: যদি ইতিমধ্যেই তেঁতুল গাছ থাকে, তা সরিয়ে ফেলে সেই স্থানে তুলসী বা শ্বেত অপরাজিতা লাগান।
২. বাবলা গাছ — সম্পর্কের অমঙ্গল আর অন্তঃকলহের উৎস
বাবলা গাছের কাঁটা ও কাঠিন্য বাস্তুশাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ তৈরি করে।
এর প্রভাবে দেখা দেয়:
- রাহু ও কেতুর দোষ বৃদ্ধি
- পারিবারিক গৃহকলহ
- সন্তানদের মধ্যে পড়াশোনায় বাধা
- দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে ওঠে
তান্ত্রিক বিশ্বাস: বাবলার কাঁটা চৌহদ্দিতে থাকলে শত্রুতা বাড়ে ও গৃহলক্ষ্মীর শক্তি দুর্বল হয়।
৩. রবার গাছ — দৃষ্টিনাশক গাছ
অনেকে বলে থাকেন, রবার গাছ ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করে। হ্যাঁ, বায়ু বিশুদ্ধিকরণে এটি সহায়ক হলেও, বাস্তুর দৃষ্টিতে এটি “নির্জীব শক্তির বাহক”।
কিভাবে ক্ষতি করে?
- মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়
- ঘরে একধরনের চাপা দুঃখের অনুভব তৈরি হয়
- মন খারাপ বা অবসাদ প্রবণতা বাড়ে
- সৌভাগ্যের প্রবাহ আটকে যায়
বাস্তু মতে: এই গাছ চাঁদের শুভ প্রভাবকে রুদ্ধ করে।
৪. কাঁটাযুক্ত গাছ (ক্যাকটাসসহ) — তীক্ষ্ণতাই সম্পর্কের ছেদ ঘটায়!
ক্যাকটাস, বাবলা, সান রোজ, থর্ন অ্যাকেশিয়া ইত্যাদি কাঁটাযুক্ত গাছ রাহুগ্রস্ত শক্তি বাড়ায়।
কী ঘটে?
- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ এবং দূরত্ব
- বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার ভাঙন
- মনোচিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা বৃদ্ধি
- ঘরের মঙ্গলকারক গ্রহগুলির প্রভাব হ্রাস
টোটকা: কাঁটা গাছ যদি উপহার হিসেবে আসে, তা অন্য কারো বাড়িতে না দিয়ে মাটিতে পুঁতে দিন এবং "ওঁ হ্রীং অশুভনাশিনী স্বাহা" মন্ত্র জপ করুন।
৫. রোজ়মেরি — শান্তির মুখোশে দুর্ভাগ্যের কণা
রোজ়মেরি দেখতে যতটা সুন্দর, বাস্তুর দৃষ্টিতে এটি ততটাই বিপজ্জনক। অনেকেই বিদেশি গাছ হিসেবে ঘরে আনেন — অথচ জানেন না, এটি বৃহস্পতির বিপরীত শক্তিকে সক্রিয় করে।
ক্ষতির রূপ:
- হঠাৎ করে অর্থহানি
- অনিদ্রা বা নৈরাশ্য
- উপার্জনের পথ বন্ধ হওয়া
- সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা
৬. মৃতপ্রায় বা শুকিয়ে যাওয়া গাছ — প্রেত শক্তির কেন্দ্র!
বাস্তুশাস্ত্রে মৃত গাছ মানে স্থায়ী নেগেটিভ এনার্জি রিসার্ভার। এর মাধ্যমে প্রেত আত্মা ও নষ্ট গ্রহশক্তি আকৃষ্ট হয়।
লক্ষণ:
- হঠাৎ অশুভ স্বপ্ন দেখা
- ঘরের কোনে কোনে ধুলো জমে থাকা
- আগুন বা জল সংক্রান্ত ছোট দুর্ঘটনা
- রোগমুক্তি বিলম্ব হওয়া
তান্ত্রিক টোটকা: শুকিয়ে যাওয়া গাছ তুলে শনির দিনে কালো কাপড়ে মুড়ে জলে ভাসিয়ে দিন।
৭. রাত্রিকালীন গন্ধযুক্ত ফুলগাছ (যেমন রজনীগন্ধা বা নাইট কুইন)
এই ধরণের গাছ সাধারণত রাতে ঘ্রাণ ছড়ায়। বাস্তু মতে, এই গন্ধ রাতের অশুভ শক্তিকে আহ্বান করে।
এর প্রভাবে:
- নিশাচর শক্তি ঘরে প্রভাব বিস্তার করে
- চন্দ্রগ্রস্ত চিন্তা এবং আতঙ্ক
- শোওয়ার ঘরে অনিদ্রা
- সন্তানদের স্বাস্থ্যহানি
আপনার ঘরে যদি ঘন ঘন গাছ মরে যায়?
তাহলে এটা সরাসরি বাস্তু ও তন্ত্র মতে চিহ্ন, যে আপনার ঘরে ইতিমধ্যে নেগেটিভ শক্তির আধিপত্য শুরু হয়েছে।
জ্যোতিষীয় সংকেত: সূর্য, বৃহস্পতি এবং চন্দ্র দুর্বল — এগুলোই গৃহের বনস্পতি শক্তিকে ক্ষয় করে।
বাস্তু সম্মত শুভ গাছ কোনগুলো? (শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য)
✅ তুলসী — শুদ্ধতা, লক্ষ্মীপ্রাপ্তি
✅ শ্বেত অপরাজিতা — শত্রুনাশ
✅ অশ্বত্থ — পুণ্য ও পূর্বজ শক্তি
✅ বাঁশগাছ (Mini bamboo) — অর্থপ্রাপ্তি ও ভাগ্যবৃদ্ধি
✅ পদ্মফুল/গাছ — দেবী শক্তির আশীর্বাদ
সবুজ মানেই শুভ নয়। গাছ মানে প্রাণ — আর সেই প্রাণ যদি ভুল জায়গায় থাকে, তাহলে তা ভবিষ্যৎকে বিষিয়ে তুলতে পারে।
বাস্তুশাস্ত্র তাই শুধু সৌন্দর্য বা সাজ নয় — এটি জীবন পরিচালনার এক অতিপ্রাচীন তন্ত্রশাস্ত্র।
📌 আজই ঘরের গাছগুলো খুঁটিয়ে দেখুন — কে জানে, কোনটা শুভ আর কোনটা অলক্ষ্মীর বীজ!