📜 পৌরাণিক মহিমা – শ্রাবণের শেষ সোমবারের কাহিনী
শাস্ত্রে বলা হয়, শ্রাবণ মাসের প্রতিটি সোমবার শিবপূজার জন্য অতুলনীয় শুভ, কিন্তু শেষ সোমবার বিশেষ শক্তিশালী।
পুরাণ অনুযায়ী, একবার দানবরাজ রাক্ষসরাজ রাবণ মহাদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য কৈলাস পর্বতই তুলে নিতে চেয়েছিল। রাবণের অহংকার এতই প্রবল ছিল যে সে মনে করেছিল, মহাদেবকে তার স্বর্গীয় প্রাসাদে নিয়ে গিয়ে নিজের পূজার্চনা করবে। মহাদেব তাঁর অটল শক্তি দিয়ে রাবণকে পর্বতের নীচে আটকে দেন। রাবণ তখন ১০ মাথা দিয়ে করুণ চিৎকার না করে বরং শিবতাণ্ডব স্তোত্র পাঠ করতে শুরু করেন, নিজের নখ দিয়ে শিবলিঙ্গে আরাধনা করে রক্ত অর্ঘ্য দেন। তাঁর এই ভক্তি ও কঠোর তপস্যায় মহাদেব তুষ্ট হয়ে তাঁকে চন্দ্রকলা-ভূষিত রূপে দর্শন দেন। সেই দিন ছিল শ্রাবণের শেষ সোমবার।
তাই এই দিনে অতীতের সমস্ত পাপ মোচন, অভিশাপ থেকে মুক্তি, এবং নতুন জীবনের সূচনা ঘটতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।
আরেকটি কাহিনী অনুযায়ী, সমুদ্র মন্থনের সময় যখন হলাহল বিষ বের হয়, তখন মহাদেব সেই বিষ পান করে নীলকণ্ঠ রূপে পরিচিত হন। বিষের তীব্রতা থেকে কণ্ঠকে শীতল রাখার জন্য দেবতা ও ঋষিমুনিরা শ্রাবণ মাসে, বিশেষত শেষ সোমবারে, শিবের গলায় জল ও বিল্বপত্র অর্পণ করেন। লোকবিশ্বাস বলে—এই দিনে করা পূজা সরাসরি মহাদেবের করুণাদৃষ্টি টানে।
লোকগাথায় আরও শোনা যায়, শ্রাবণের শেষ সোমবারে কপাল ও ভাগ্যের রূপরেখা বদলায়। গ্রামীণ এলাকায় এই দিনটিকে ‘মনোকামনা সোমবার’ বলা হয়, যেখানে কুমারীরা স্বামী লাভের জন্য, গৃহবধূরা স্বামীর দীর্ঘায়ুর জন্য, আর ব্যবসায়ীরা ধনলাভের জন্য উপবাস ও পূজা করেন।
২. তান্ত্রিক টোটকা ও বিশেষ আচার
এই দিনকে ঘিরে বহু গোপন তান্ত্রিক পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে, যা গুরু-শিষ্য পরম্পরায় এসেছে। এখানে কয়েকটি জনপ্রিয় ও ফলদায়ক টোটকা তুলে ধরা হল—
(ক) শিবলিঙ্গে কালো তিল ও দুধ অর্পণ
- সকাল বেলা সূর্যোদয়ের আগে স্নান সেরে সাদা কাপড় পরে নিন।
- শিবমন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, কাঁচা দুধ ও কালো তিল মিশিয়ে অর্পণ করুন।
- মনে মনে “ॐ নমঃ শিবায়” ১০৮ বার জপ করুন।
- তান্ত্রিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এতে পূর্বজন্ম ও বর্তমান জীবনের সমস্ত কষ্ট হ্রাস পায়, বিশেষত শনি ও রাহুর কুপ্রভাব কমে যায়।
(খ) লাল সুতোর ‘রক্ষা-বন্ধন’ শিবের জন্য
- লাল বা হলুদ সুতো নিয়ে সাতটি গিঁট দিন।
- প্রতিটি গিঁট দেওয়ার সময় আপনার জীবনের সাতটি প্রধান দুঃখ বা বাঁধা মনে করে প্রার্থনা করুন।
- সুতোটি শিবলিঙ্গের পাদদেশে বাঁধুন।
-
পূজা শেষে সেই সুতো বাড়িতে এনে মূল দরজায় বেঁধে রাখলে অশুভ শক্তি প্রবেশ করে না এবং পরিবারে শান্তি থাকে।
(গ) বিল্বপত্রে কামনা লিখে অর্পণ
- সাদা কালি বা চন্দন দিয়ে বিল্বপত্রে নিজের কামনা লিখুন—যেমন ধন, স্বাস্থ্য, সন্তান, বিবাহ, ব্যবসা উন্নতি।
- শিবলিঙ্গে সেই পত্র অর্পণ করুন।
- প্রাচীন বিশ্বাস, শ্রাবণের শেষ সোমবারে অর্পিত ইচ্ছা দ্রুত পূর্ণ হয়, কারণ এই দিন মহাদেব ও পার্বতী উভয়ের কৃপা মেলে।
(ঘ) দারিদ্র্য দূর করার জন্য ‘কালো ধান’ টোটকা
- ১১টি কালো ধান লাল কাপড়ে বেঁধে নিন।
- পূজা শেষে এটি মন্দিরের বাইরে ভিক্ষুককে দান করুন।
- তান্ত্রিকরা বলেন, এতে চিরস্থায়ী দারিদ্র্য দূর হয় এবং স্থায়ী ধনলাভ হয়।
(ঙ) নীলকণ্ঠ তোতা দর্শন
- গ্রামীণ বিশ্বাস অনুযায়ী, শ্রাবণের শেষ সোমবারে নীলকণ্ঠ পাখি দেখা মহাদেবের আশীর্বাদ হিসেবে ধরা হয়।
- এই দিনে মহাদেবের নাম জপ করে নীলকণ্ঠ পাখির দর্শন করলে জীবনের কষ্ট হ্রাস পায়।
🪔 দিনের পূর্ণ আচারপদ্ধতি 🪔
দিনের সম্পূর্ণ আচারপদ্ধতি
ভোরে উঠুন – ব্রহ্মমুহূর্তে স্নান সেরে নতুন বা ধোয়া কাপড় পরুন।
পূর্বদিক মুখী আসন – পূজার সময় পূর্ব বা উত্তরমুখী হয়ে বসা সর্বাধিক শুভ।
দীপ প্রজ্বলন – উত্তর-পূর্ব কোণে ঘৃতের প্রদীপ জ্বালান, সাথে ধূপকাঠি।
শিবপূজা – গঙ্গাজল, দুধ, দই, মধু, ঘি, চিনি, কালো তিল, চন্দন দিয়ে শিবলিঙ্গ অভিষেক করুন।
বিল্বপত্র ও ধূপ-দীপ – প্রতিটি বিল্বপত্রে ‘ॐ নমঃ শিবায়’ উচ্চারণ করে অর্পণ করুন।
মন্ত্র জপ – “ॐ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্” অন্তত ১০৮ বার জপ করুন।
অর্ঘ্য প্রদান – কাঁচা চাল, ফুল, ফল, মিষ্টি অর্পণ করুন।
দান-ধ্যান – দরিদ্রকে খাদ্য, তেল, কাপড়, কালো তিল, লোহা বা নীলবস্ত্র দান করুন।
রাতের ব্রত – সম্ভব হলে নিরামিষ খাবার গ্রহণ করুন এবং রাত অবধি শিবনাম জপ করুন।
শিব আরতি – সন্ধ্যায় শিব আরতি করলে পূজার ফল দ্বিগুণ হয়।
🚫 নিষেধ 🚫
❌ ঝগড়া বা কটু কথা
❌ মিথ্যা বলা
❌ মাংস-মদ-মাছ ভক্ষণ
❌ অন্যের মন কষ্ট দেওয়া
🔱 তান্ত্রিক বিশেষ টিপস 🔱
💠 শনি-রাহু শান্তির জন্য কালো কাপড়, তিল, সরষের তেল, লোহা দান করুন।
💠 দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করিয়ে সেই দুধ তুলসীর গোড়ায় দিন।
💠 রাতে শিব মন্ত্র জপ করে মাথার নিচে বিল্বপাতা রেখে ঘুমালে দুঃস্বপ্ন দূর হয়।
✨ আজ রাত পেরোলেই আপনার সুযোগ…
🌌 নিজের ভাগ্যের পাতা নতুন করে লেখার…
🕉️ মহাদেবের চরণে সমস্ত দুঃখ সমর্পণের…
📿 বিশ্বাস রাখুন, ভক্তি রাখুন…
“শিব ভক্তের কোনো ক্ষতি হতে পারে না” 💖
বিশেষ তান্ত্রিক পরামর্শ
কালো কাপড়, কালো তিল, সরষের তেল, লোহা—শনি ও রাহু শান্তির জন্য দান করা শুভ।
পাঁকা দুধে শিবলিঙ্গ স্নান করিয়ে সেই দুধ তুলসী গাছের গোড়ায় ঢাললে গৃহস্থের অশান্তি কমে।
রাতে শিব মন্ত্র জপ করে মাথার নিচে বিল্বপাতা রেখে ঘুমালে দুঃস্বপ্ন দূর হয়।