রাহু – গ্রহ না কি মহাজাগতিক ষড়যন্ত্র?
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একে বলেন কেবলই একটি গাণিতিক বিন্দু, অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষপথ যেখানে একে অপরকে ছেদ করেছে, সেই ছেদবিন্দুই রাহু। দৃশ্যমান নয়, স্পর্শযোগ্য নয়, তবুও হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের ভাগ্যে তার অদৃশ্য ছায়া নেমে আসে।
প্রশ্ন হলো—কীভাবে এক "অস্তিত্বহীন বিন্দু" মানুষের জীবনে এমন তীব্র প্রভাব ফেলতে পারে? নাকি রাহু আসলে কোনও মহাজাগতিক ষড়যন্ত্র, যা মানুষকে বিভ্রান্ত, বিপথগামী ও দুঃখী করে রাখে?
পুরাণের রাহু – এক চিরন্তন প্রতিশোধের কাহিনি
বিষ্ণুপুরাণের কাহিনি অনুযায়ী, অমৃত মন্থনের সময় অসুর স্বরভানু দেবতাদের ছদ্মবেশে অমৃত পান করে। সূর্য ও চন্দ্র তাকে ধরে ফেললে ভগবান বিষ্ণু সুদর্শন চক্রে তার মস্তক ছিন্ন করেন।
কিন্তু, এখানেই শুরু ষড়যন্ত্রের গল্প। দেহ ও মাথা আলাদা হলেও রাহু (মস্তক) ও কেতু (দেহ) অমরত্ব লাভ করে। অর্থাৎ, মহাজাগতিক নিয়ম ভেঙে তারা আজও মানুষকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
এখানে এক চিরন্তন প্রতিশোধ কাজ করছে—সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করা (সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ)। অর্থাৎ, রাহুর প্রকৃত স্বরূপ হলো গ্রাস, ছায়া, ভ্রান্তি এবং গোপন ষড়যন্ত্র।
জন্মকোষ্ঠীতে রাহুর অবস্থান – কোথায় অশুভ ফল?
জ্যোতিষ মতে রাহু "অশুভ গ্রহ" হলেও, তার প্রকৃত কারসাজি নির্ভর করে সে কোন ঘরে বসেছে তার ওপর—
- ৫ম, ৯ম ও ১২তম ঘরে রাহু → সর্বাধিক অশুভ ফল, মানসিক কষ্ট, পারিবারিক ভাঙন, আর্থিক ক্ষতি।
- রাহু + সূর্য (সুর্যগ্রহণ যোগ) → কর্তৃত্ব হারানো, সরকারি ঝামেলা।
- রাহু + চন্দ্র (গ্রহণ যোগ) → মনের বিভ্রান্তি, উদ্বেগ, ভয়।
- রাহু + মঙ্গল (অঙ্গারক যোগ) → হিংসা, দুর্ঘটনা, রক্তপিপাসু প্রবৃত্তি।
প্রশ্ন হলো—এমন ভয়ঙ্কর অবস্থার প্রতিকার কীভাবে সম্ভব?
রাহুর দশা – এক অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের সক্রিয় সময়
রাহু ১৮ বছর ধরে এক সম্পূর্ণ রাশিচক্র অতিক্রম করে। ফলে প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন এক পর্যায় আসে, যখন তার ভাগ্য যেন অচেনা অদৃশ্য শক্তির হাতে নিয়ন্ত্রিত হয়।
জ্যোতিষ মতে, রাহুর মহাদশা বা অন্তর্দশা চলাকালীন মানুষের জীবন সবচেয়ে অস্থির, অন্ধকার ও ষড়যন্ত্রময় হয়ে ওঠে।
প্রতিকার – কেন দেবী দুর্গাই রাহুর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অস্ত্র?
অনেক জ্যোতিষগ্রন্থে রাহুকে "ছলনার গ্রহ" বলা হয়েছে। ছলনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য চাই মহাশক্তির পূজা। আর সেই মহাশক্তিই হলেন দেবী দুর্গা।
- নবরাত্রি বা দুর্গাপুজোর ৯ দিন ধরে ভক্তিভরে দেবী দুর্গার পূজা করলে রাহুর অশুভ শক্তি হ্রাস পায়।
- দুর্গা হলেন অশুভ বিনাশিনী—তাঁর শক্তির প্রভাবে রাহুর ভ্রান্তি, বিভ্রান্তি, আসক্তি ও অকল্যাণ ধ্বংস হয়।
- বিশেষত, রাহুর মহাদশায় প্রতিদিন দুর্গা স্তোত্র, দুর্গা কবচ বা দুর্গা সপ্তশতী পাঠ অত্যন্ত কার্যকর প্রতিকার।
রাহু কি আসলেই গোপন শক্তির প্রতীক?
আধুনিক যুগে অনেক গবেষক রাহুকে কেবল গ্রহ নয়, বরং মানব মনের অন্ধকার দিকের প্রতীক বলেছেন।
- লোভ, ভ্রান্তি, ভয়, ভোগবিলাস, আসক্তি—সবই রাহুর প্রভাব।
- ষড়যন্ত্র, ভুয়ো খবর, বিভ্রান্তি ছড়ানো—এগুলোও একধরনের "রাহু-তত্ত্ব"।
অর্থাৎ, রাহু কেবল আকাশে নয়, আমাদের সমাজে ও মানসিকতাতেও সক্রিয়।
রাহুর ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি সহজ নয়। জন্মপত্রিকায় যদি রাহু অশুভ ঘরে বসে থাকে, তবে জীবনে নানা রহস্যময় বাঁধা আসবেই।
তবে দেবী দুর্গার পূজা-আরাধনাই হলো সেই একমাত্র মহাশক্তি, যিনি রাহুর অন্ধকার ছায়াকে ভেদ করে মানুষকে আলোয় ফিরিয়ে আনেন।
অতএব, যদি আপনার জীবনে হঠাৎ করে দুর্ভাগ্য, অস্থিরতা, ভয়, ব্যর্থতা, বা ষড়যন্ত্রের ছায়া নেমে আসে, তবে বুঝবেন—রাহু সক্রিয়। আর তখনই আশ্রয় নিতে হবে দেবী দুর্গার পূজায়।
👉 এই বিষয়টি যদি পাঠকের মনে গভীর প্রশ্ন জাগিয়ে থাকে, তবে মন্তব্যে জানান—আপনার কোষ্ঠীতে রাহু কোথায় বসে আছে?
কারণ, আজকের সমাজে অনেক ষড়যন্ত্রের মূলে হয়তো আপনার জন্মছকের সেই অদৃশ্য রাহুই সক্রিয়।
✦ Asian Top 10 Astrologer Sri Joydeb Sastri