প্রতিদিন আমরা বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাড়ি থেকে বের হই— পরীক্ষায় যাওয়া, চাকরির ইন্টারভিউ, ব্যবসায়িক আলোচনা, মামলা-মোকদ্দমা কিংবা আর্থিক লেনদেন। বৈদিক জ্যোতিষ ও নেমিত্ত শাস্ত্রে বলা হয়, বাড়ি থেকে বেরোনোর প্রথম দৃশ্য দিনের সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখে।
যে দৃশ্য শুভ, তা বাধা হ্রাস, সুযোগ বৃদ্ধি ও সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ায়।
আবার কিছু দৃশ্য রয়েছে যেগুলি দেখা অশুভ বলে মনে করা হয়— তবে অনেক ধারণা সম্পর্কে বাস্তবে মানুষের ভুল বোঝাবুঝিও রয়েছে।
এখানে জানুন—
যাত্রার সময় কোন জিনিস দেখা শুভ, আর কোনটি ব্যর্থতা বা সাফল্যের ইঙ্গিত দেয়।
মানুষের প্রতিটি কাজেই কিছু না কিছু শুভ ও অশুভ লক্ষণ জ্যোতিষশাস্ত্রে নির্ধারিত রয়েছে। প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থে বলা হয়েছে—
“निमित्तानि शुभानि कुर्वन्ति कार्यसिद्धिम्”
অর্থাৎ, শুভ লক্ষণ বা “নিমিত্ত” জীবনে কর্মসাফল্য এনে দেয়।
সকালবেলা বা যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেরোনোর আগে যে দৃশ্য চোখে পড়ে, তা অনেক সময়ই দিনের ফলাফলে প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়। জ্যোতিষ, নেমিত্ত শাস্ত্র, পুরাণ ও স্থানীয় লোকাচারে এই সব লক্ষণের বিশদ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
নীচে দেখে নিন কোন জিনিস দেখা অত্যন্ত শুভ এবং কেন—
① গরু দেখা – সম্পদ ও লক্ষ্মীর আগমন
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় গরু দেখা অত্যন্ত শুভ।
হিন্দু শাস্ত্রে গরুকে লক্ষ্মীর রূপ বলা হয়।
- গরু মানে ধনসম্পদ বৃদ্ধি
- বাছুর সহ গরু দেখা আরও শুভ
- কর্ম সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে
বৃহস্পতি গ্রহের সঙ্গে গরুর যোগ থাকায় এটি জ্ঞান, সৌভাগ্য, সম্মান ও উন্নতি নির্দেশ করে।
② কয়েন বা নোট – অর্থপ্রাপ্তি ও বিনিময় যোগ
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় কয়েন বা নোট দেখা অর্থাগমের ইঙ্গিত।
জ্যোতিষ মতে:
- শুক্র ও লক্ষ্মী তত্ত্ব সক্রিয় হয়
- কাজের বাধা দূর হয়
- ব্যবসা, আলোচনা, বাণিজ্য, লেনদেনে বিশেষ সফলতা পাওয়া যায়
ব্যক্তির “অর্থ গণণা যোগ” এই সময়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
③ পান – শুভ উদ্বোধন
বৈদিক শাস্ত্রে পান-পাতা মানে:
- মঙ্গলময় সূচনা
- দেবতার কৃপা
- শত্রুনাশ
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় পান দেখা মানে যাত্রায় সৌভাগ্য সঙ্গী হবে।
④ শবযাত্রা – ভুল ধারণা ভাঙুন
অনেকেই মনে করেন শবযাত্রা দেখা অশুভ।
কিন্তু জ্যোতিষশাস্ত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো।
- মৃত্যু মানে এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ও নতুনের শুরু
- এটি পাপমোচন ও বাধা কেটে যাওয়ার লক্ষণ
- বহু নেমিত্ত শাস্ত্রে শবযাত্রা দেখাকে অত্যন্ত শুভ বলা হয়েছে
মানুষের অশুভ কষ্ট কাটিয়ে নতুন সাফল্য আসার ইঙ্গিত।
⑤ হাতি – রাজযোগ ও সম্মান
হাতি হল রাজলক্ষণ।
রাজা, শক্তি, খ্যাতি ও প্রশাসনের প্রতীক।
-
বাইরের পথে হাতি দেখা মানে
উচ্চপদস্থ ব্যক্তির সাহায্য বা সুরক্ষা মিলবে - সম্মান ও নেতৃত্ব বৃদ্ধি হবে
- সরকারি কাজে বিশেষ শুভ ফল
চন্দ্র ও বৃহস্পতির শক্তি এখানে সক্রিয় হয়।
⑥ জীবন্ত মাছ – সফল উদ্যোগ
মাছ মানে:
- গতি
- জীবন
- চলমান ভাগ্য
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় জীবন্ত মাছ দেখা মানে—
যে কাজ শুরু করবেন তা সফলভাবে এগোবে।
ব্যবসা, চাকরি, চুক্তি, অর্থ সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত শুভ।
⑦ ফুল – কর্মসিদ্ধি
ফুল দেখা মানে:
- পবিত্রতা
- আনন্দ
- সাফল্যের প্রস্ফুটন
“গৃহত্যাগে পুষ্পদর্শন” বহু নেমিত্ত গ্রন্থে শুভ বলে বলা হয়েছে।
এটি বোঝায়—
কাজ ভালোভাবে শেষ হবে এবং মানসিক শান্তি বজায় থাকবে।
⑧ পাত্র ভরা গুড় – অন্নলক্ষ্মীর আশীর্বাদ
গুড় মানে:
- সমৃদ্ধি
- সৌভাগ্য
- অন্নপূর্ণার কৃপা
গুড় ভরা পাত্র দেখা মানে:
- গৃহে অন্ন ও ধনের প্রবাহ বাড়বে
- অর্থনৈতিক স্থিতি স্থায়ী হবে
বিশেষ করে ব্যবসা বা লেনদেন সংক্রান্ত কাজে অত্যন্ত শুভ।
⑨ পাখিদের খাওয়া – শুভ সমষ্টি ফল
পাখিদের একসঙ্গে খাবার খেতে দেখা:
- শুভ সংযোগ
- সঠিক সময়ে সঠিক সহযোগিতা
- সামাজিক সাফল্য
সংসদ-যোগ, পারিবারিক সমর্থন ও সৌভাগ্যের নির্দেশ।
⑩ জলভরা পাত্র – সৌভাগ্যের প্রবাহ
জল মানে:
- জীবন
- বিশুদ্ধতা
- গতি
জলভরা পাত্র দেখা মানে—
দিনটি ফলপ্রসূ ও শান্তিপূর্ণ কাটবে।
ভবিষ্যতের দুর্ভাবনা কমে।
সারসংক্ষেপ – কোন দৃশ্য শুভ
| দৃশ্য | ফলাফল |
| গরু | অর্থ ও সৌভাগ্য |
| কয়েন/নোট | লেনদেন ও অর্জন সফল |
| পান | শুভ সূচনা |
| শবযাত্রা | বাধা মুক্তি ও নতুন সূচনা |
| হাতি | সম্মান, রাজযোগ |
| জীবন্ত মাছ | কর্মসিদ্ধি |
| ফুল | মঙ্গলময় ফল |
| গুড় | অন্ন ও ধন বৃদ্ধি |
| পাখির খাবার খাওয়া | সমর্থন ও সুযোগ |
| জল | শান্তি ও অগ্রগতি |
১) শবযাত্রা দেখা কি অশুভ?
না। জ্যোতিষ মতে শবযাত্রা দেখা বাধা দূর হওয়ার ইঙ্গিত।
২) বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় গরু দেখা কেন শুভ?
গরু ধনলক্ষ্মীর প্রতীক। ধন, কর্ম ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি করে।
৩) কোন দৃশ্য দেখা কর্ম সাফল্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয়?
জীবন্ত মাছ ও হাতি – উভয়ই সাফল্য ও গতি নির্দেশ করে।
৪) এগুলি কি বৈদিক শাস্ত্রে উল্লেখ আছে?
হ্যাঁ, নেমিত্ত শাস্ত্র, পুরাণ এবং আচার-গ্রন্থে এই লক্ষণগুলির ব্যাখ্যা রয়েছে।
শেষ কথা
বৈদিক জ্যোতিষ বলছে—
“দিনের প্রথম দৃষ্টি ভাগ্যের দরজা খুলে দেয়।”
সঠিক সচেতনতা, সৎমন ও শাস্ত্রের নির্দেশ মানলে জীবন, কর্ম ও ভাগ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়|