অগ্রহায়ণ এলেই শুরু হয় বাঙালি হিন্দুদের বিয়ের সিজন। শুভ লগ্ন, তিথি, নবরাত্রির পরের সময়—সব মিলিয়ে এই সময়টাতেই অধিকাংশ বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু একটা বিষয় অধিকাংশ মানুষই অবহেলা করেন—বিয়ের কার্ড।
শুধু নিমন্ত্রণ নয়, বিয়ের কার্ড একটি শক্তিশালী শুভ-শক্তির বাহক। জ্যোতিষ, বাস্তু ও পুরাণ অনুযায়ী বিয়ের কার্ডের রং, ডিজাইন, লেখা—সবই দাম্পত্যজীবনের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে।
বেদে বলা আছে—
“यद् भावं तद् भवति”
(যে ভাব, সেই ফল)
শুভ শক্তিকে আহ্বান করে শুরু হলে বিবাহিত জীবনও শুভ হয়। আর তার প্রথম ধাপই বিয়ের কার্ড।
🔱 বিয়ের কার্ড নির্বাচন—জ্যোতিষ ও বেদীয় শাস্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি
🟣 ১) কার্ডে বর–কনের ছবি রাখা অশুভ কেন?
বর্তমানে আধুনিক ট্রেন্ডে বর ও কনের ছবি দিয়ে কার্ড তৈরি হয়।
কিন্তু শাস্ত্র বলছে—
✔ এতে দৃষ্টি দোষ পড়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
✔ বিয়ের আগে অশুভ নজর ব্যক্তিগত সুখ-শান্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
✔ ‘অপর-দৃষ্টি’ বা ‘অমঙ্গল-দৃষ্টি’ গ্রহদোষ সক্রিয় করতে পারে।
অতএব, বিয়ের কার্ডে বর-কনের ছবি না রাখাই শ্রেয়।
🔴 ২) কোন রং বিয়ের কার্ডের জন্য সবচেয়ে শুভ?
🟢 লাল, হলুদ ও সাদা—এই তিন রং জ্যোতিষ অনুসারে সর্বাধিক মঙ্গলদায়ক।
🔶 লাল (মঙ্গল + লক্ষ্মী শক্তি)
প্রেম, উত্সাহ, বিয়ের আগুন, শক্তি ও সৌভাগ্যের প্রতীক।
দাম্পত্য বন্ধনকে দৃঢ় করে।
🟡 হলুদ (বৃহস্পতি)
জ্ঞান, শুভদৃষ্টি, আশীর্বাদ, পবিত্রতা।
বৃহস্পতির কৃপায় বিবাহিত জীবনে সমৃদ্ধি ও সন্তান সুখ বৃদ্ধি পায়।
⚪ সাদা (চন্দ্র + শান্তি)
শান্তি, পবিত্রতা, মানসিক সমতা ও শুভতা আনে।
কনের চন্দ্র-গ্রহের সমতা বজায় থাকে।
⚫ কোন রং এড়িয়ে চলবেন?
✔ নীল (শনি)
✔ কালো (রাহু)
✔ গাঢ় সবুজ (কেতু)
এই রংগুলি বিয়েতে অপ্রত্যাশিত সমস্যা বা মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে।
🕉️ ৩) বিয়ের কার্ডে দেবতার মন্ত্র ছাপানোর রহস্য
বিয়ের কার্ডে গণেশ মন্ত্র বা বিষ্ণু মন্ত্র ছাপালে:
✔ বাধা দূর হয় (বিঘ্নহর্তা গণেশ)
✔ বিবাহিত জীবনে স্থায়িত্ব আসে (শ্রীবিষ্ণু)
✔ পবিত্রতা ও অশুভ শক্তি থেকে সুরক্ষা মেলে
✔ নতুন জীবনে ইতিবাচক শক্তি প্রবাহিত হয়
প্রস্তাবিত মন্ত্র:
🔸 “শ্রী গণেশায় নমঃ”
🔸 “ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায়”
🔱 ৪) বিয়ের কার্ড বিতরণের আগের ২টি অপরিহার্য নিয়ম
🪔 (i) প্রথমে গণেশ পূজা
যে কোনও শুভ কাজের সূচনা গণেশবন্দনায়।
কার্ড ছাপানো থেকে বিতরণ—সবকিছুর আগে গণেশ পূজা করলে
✔ বাধা দূর হয়
✔ বিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়
🛕 (ii) প্রথম কার্ড ইষ্টদেবতা বা মন্দিরে নিবেদন
দেবতার কাছে প্রথম নিমন্ত্রণ পৌঁছালে
✔ আশীর্বাদ বৃদ্ধি পায়
✔ দাম্পত্যজীবনে দেবকৃপা স্থায়ী হয়
🏠 ৫) বিয়ের কার্ড বাড়িতে কোথায় রাখবেন?
কার্ডগুলি কখনোই
✘ বিছানার পাশে,
✘ টেবিলের নিচে,
✘ রান্নাঘরে,
✘ ছোটোখাটো জায়গায়
রাখবেন না।
✔ শুভ দিক: উত্তর–পূর্ব (ইশান কোণ)
এটি দেবশক্তি, বুধ, বৃহস্পতি ও পবিত্রতার দিক।
এখানে কার্ড রাখলে—
✔ দাম্পত্যজীবনে শান্তি
✔ বুদ্ধিবৃত্তি বৃদ্ধি
✔ সমঝোতা ও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়
🌼 ৬) বিয়ের কার্ডের ডিজাইন সম্পর্কে বেদীয় নির্দেশ
✔ শুভ চিহ্ন
- শঙ্খ
- পদ্ম
- শ্রীচিহ্ন
- অক্ষত
- কলশ
- স্বস্তিক
- নাড়ু-ঘট
- উলুধ্বনি মোটিফ
✔ এড়িয়ে চলুন
- কঙ্কাল/ডার্ক আর্ট
- বিমূর্ত আক্রমণাত্মক ডিজাইন
- পাতাল লোকের প্রতীক
- অস্পষ্ট সাদা-কালো গ্রাফিকস
🪔 ৭) অ্যাস্ট্রোলজিক্যাল টিপস — বিয়ের কার্ড শুভ শক্তি বাড়াতে যা করবেন
✔ কার্ডের উপর শ্রীযন্ত্রের ক্ষুদ্র চিহ্ন খোদাই করতে পারেন
✔ প্রথম কার্ডটি আগুনের দিশা (দক্ষিণ-পূর্ব) মুখ করে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন
✔ কাগজের মান খুব পাতলা না হওয়াই শ্রেয়—বৃহস্পতি কাগজ শাসন করেন
✔ কার্ড বেছে নেওয়ার দিন শুক্রবার বা বৃহস্পতিবার রাখলে সর্বোচ্চ শুভ ফল
⭐ উপসংহার
বিয়ের কার্ড শুধু একটি নিমন্ত্রণপত্র নয়, এটি দাম্পত্যজীবনের প্রারম্ভিক শুভশক্তির মাধ্যম।
সঠিক রং, সঠিক ডিজাইন, সঠিক স্থানে রাখা—
এসবই দাম্পত্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী ভালোবাসা নিয়ে আসে।
© Astrologer Joydeb Sastri — All Rights Reserved