Skip to Content

ভূত চতুর্দশী : চোদ্দ শাক, চোদ্দ প্রদীপ ও অশুভ শক্তি দূর করার প্রাচীন তন্ত্র

লিখেছেন: জ্যোতিষী জয়দেব শাস্ত্রী
19 অক্টোবর, 2025 by
ভূত চতুর্দশী : চোদ্দ শাক, চোদ্দ প্রদীপ ও অশুভ শক্তি দূর করার প্রাচীন তন্ত্র
জয়দেব শাস্ত্রী । ৫১কালিবাড়ি

ভূত চতুর্দশী — কালীপুজোর আগের রহস্যময় দিন

কালীপুজোর আগের দিন, অর্থাৎ অমাবস্যার আগের চতুর্দশী তিথি কে বলা হয় ভূত চতুর্দশী। এই দিনটি শুধুমাত্র এক ধর্মীয় আচার নয়, এটি প্রকৃতি, শরীর ও আত্মার শুদ্ধিকরণের এক শক্তিশালী প্রতীক।

পুরাণ মতে, এই দিনে মা কালী অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন — তাই ঘরে ঘরে আলো জ্বালিয়ে, প্রদীপের মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখার প্রথা চলে আসছে যুগের পর যুগ।

🪔 চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম ও কারণ

ভূত চতুর্দশীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো। এই প্রদীপগুলির মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে আলো উৎসর্গ করা হয়।

বিশ্বাস করা হয়, এই আলো পৌঁছে যায় পিতৃলোকে — এবং তাঁরা আশীর্বাদ করেন পরিবারের কল্যাণের জন্য।

চোদ্দ প্রদীপ দেওয়ার সঠিক নিয়মঃ

  1. সূর্যাস্তের পর, ঘরের প্রতিটি কোণে একটি করে প্রদীপ রাখুন।
  2. দরজা, রান্নাঘর, তুলসী তলা, বাথরুম, ছাদ — সব জায়গায় প্রদীপ রাখতে হয়।
  3. প্রদীপে তিলের তেল বা ঘি ব্যবহার করলে অত্যন্ত শুভ হয়।
  4. প্রদীপ জ্বালানোর সময় মনে মনে বলুন —
    “পিতৃভ্যো নমঃ, অশুভ শক্তি দূর হোক, শুভ শক্তি আগমন করুক।”ভূত চতুর্দশী

🌿 চোদ্দ শাক খাওয়ার রহস্য ও উপকারিতা

ভূত চতুর্দশীর আর এক অঙ্গ হলো চোদ্দ রকমের শাক খাওয়া

এর পেছনে রয়েছে প্রকৃতির বিজ্ঞান ও আয়ুর্বেদ।

এই সময়ে ঋতু পরিবর্তন হয় — বর্ষা থেকে হেমন্তে প্রবেশ। শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এই চোদ্দ শাক সাহায্য করে।

চোদ্দটি শাক সাধারণত এইগুলো হতে পারে —

  1. পলতা
  2. নটে
  3. হিংচে
  4. মেথি
  5. সজনে পাতা
  6. কলমি
  7. শুষনি
  8. শাক পুই
  9. গিমা
  10. লাউ পাতা
  11. কচুশাক
  12. ধনে পাতা
  13. সর্ষে শাক
  14. তুলসী পাতা

এই শাকগুলি একসঙ্গে সিদ্ধ করে সামান্য লবণ দিয়ে খেলে শরীর শুদ্ধ হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং পিতৃশান্তি লাভ হয়।

🥗 নিরামিষ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা

এই দিনটি কালীপুজোর আগের দিন, তাই এটি একটি পবিত্র তিথি

তন্ত্রশাস্ত্রে বলা হয়েছে —

“চতুর্দশ্যাং নিষিদ্ধ মাংস, কালীপূর্বে শান্তিপ্রদম।”

অর্থাৎ, এই দিনে মাংস ভোজন অশুভ শক্তিকে আহ্বান করে। তাই নিরামিষ আহার করা অত্যন্ত জরুরি।

এই দিন খেতে হয় —

  • চোদ্দ শাক
  • খিচুড়ি
  • বেগুন ভাজা
  • চাটনি
  • দই ও মিষ্টি

এভাবে নিরামিষ আহার গ্রহণ করলে ঘরের নেতিবাচক শক্তি দূর হয় এবং মন শান্ত থাকে।

🔱 বিশেষ টোটকা ও করণীয়

  1. ঘোড়ার নাল — বাড়ির প্রধান দরজার উপরে ঘোড়ার নাল লাগান। অশুভ শক্তি দূরে থাকবে।
  2. তুলসী ও গাঁদা গাছ — দরজার দুই পাশে রাখলে ঘরে শুভ শক্তি প্রবেশ করে।
  3. স্বস্তিক চিহ্ন অঙ্কন — লাল সিঁদুর দিয়ে দরজার উপরে স্বস্তিক আঁকুন।
  4. হনুমান পূজা — এই দিন সকালে হনুমানজীর পুজো করলে ভয়, ভূতপ্রেত ও নেতিবাচক প্রভাব দূর হয়।
  5. গঙ্গাজল ছিটানো — সন্ধ্যায় ঘরের প্রতিটি কোণে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিন। এতে স্থায়ী শুভ শক্তি বাসা বাঁধে।
  6. কালো তিল দান — সন্ধ্যায় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে কালো তিল ও জল অর্পণ করুন।
  7. রুদ্রাক্ষ ধারণ — এই দিনে রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

🌑 শাস্ত্রীয় তাৎপর্য

স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে —

“চতুর্দশ্যাং প্রদীপানং ভূতপিশাচ নাশনম।”

অর্থাৎ, ভূত চতুর্দশীর দিনে প্রদীপ জ্বালালে সমস্ত অশুভ আত্মা দূর হয়।

এই দিনটি হলো আলো ও অন্ধকারের সংঘর্ষের দিন, যেখানে মানুষ নিজের অন্তরের আলো জ্বালিয়ে ভয় ও অশুভতার উপর জয় লাভ করে।

ভূত চতুর্দশী মানে শুধু একটা প্রথা নয় — এটি হলো আত্মার পরিশুদ্ধি, শরীরের সুস্থতা, আর ঘরের শুভশক্তি জাগ্রত করার এক মহাযজ্ঞ

এই দিন নিয়ম মেনে চোদ্দ শাক খান, চোদ্দ প্রদীপ জ্বালান, হনুমানজীর নাম স্মরণ করুন — দেখবেন জীবনের সমস্ত অন্ধকার ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে। 🌟

ভূত চতুর্দশী : চোদ্দ শাক, চোদ্দ প্রদীপ ও অশুভ শক্তি দূর করার প্রাচীন তন্ত্র
জয়দেব শাস্ত্রী । ৫১কালিবাড়ি 19 অক্টোবর, 2025
Share this post
Tags
Archive