পুজোর মাস চলে এসেছে। দুর্গাপুজোর আগে ভোল বদলানোর নেশা অনেকেরই থাকে। ব্যস্ত জীবনে দিনের বেলায় সময় হয় না, তাই অফিস থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যার পর বা সূর্যাস্তের পরে অনেকেই চুল কাটতে চলে যান। কিন্তু জানেন কি? প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্র, বাস্তুশাস্ত্র ও পুরাণ অনুসারে এই অভ্যাস আপনার জীবনে অশান্তি, অর্থসঙ্কট এবং দুর্ভাগ্য ডেকে আনতে পারে।
আমাদের ঠাকুরমা-দিদিমাদের থেকে শুরু করে প্রাচীন ঋষি-মুনিরা বারবার সতর্ক করে গেছেন:
“সূর্যাস্তের পর চুল ও নখ কাটা জীবনের সৌভাগ্য, সম্পদ এবং শান্তির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।”
কিন্তু কেন? কেবলই কি এটি কুসংস্কার, নাকি এর পিছনে লুকিয়ে আছে জ্যোতিষীয় যুক্তি এবং শক্তিশালী মহাজাগতিক রহস্য? আসুন ধাপে ধাপে জেনে নিই।
🌅 সূর্যাস্তের গূঢ় মাহাত্ম্য — জ্যোতিষ ও পুরাণের আলোকে
হিন্দু শাস্ত্রে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত — এই দুই সময়কে জীবনের অতিমাত্রায় শক্তিশালী কালবিন্দু হিসেবে ধরা হয়। এই সময়ে মহাজাগতিক শক্তির বিশাল পরিবর্তন ঘটে।
- সূর্যাস্তের সময়, দিনের ইতিবাচক শক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং রাত্রির তামসিক শক্তি প্রবল হতে শুরু করে।
- জ্যোতিষ অনুসারে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময়কে "রাহুকাল" ধরা হয়, যা অত্যন্ত অশুভ।
- এই সময়ে মা লক্ষ্মী আমাদের গৃহে প্রবেশ করেন। সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বালানো, শঙ্খ বাজানো, ধূপ-ধুনো করা — সবই তার প্রতীক।
এমন সময় চুল বা নখ কাটা মানে লক্ষ্মীর শক্তিকে অসম্মান করা। বিশ্বাস করা হয়, এর ফলে মা লক্ষ্মী গৃহত্যাগ করেন এবং জীবনে অর্থাভাব, পারিবারিক অশান্তি ও নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করে।
✂️ সূর্যাস্তের পর চুল কাটা — শাস্ত্রীয় কারণ
হিন্দু ধর্মশাস্ত্র ও বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে চুল কাটার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে:
- সূর্যাস্তের পর শরীর থেকে শক্তি সঞ্চালন ধীর হয়, ফলে চুল বা নখ কাটলে দেহের প্রাকৃতিক আভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- আয়ুর্বেদ মতে, সন্ধ্যার পরে চুল কাটলে শরীরের প্রাকৃতিক প্রাণশক্তি দুর্বল হয়।
- মনুস্মৃতি ও গৃহ্যসূত্র-এ স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, সূর্যাস্তের পর দেহ থেকে কোনও অংশ আলাদা করা নিষিদ্ধ।
💰 অর্থকষ্ট ও মা লক্ষ্মীর অভিশাপ
প্রাচীন কাহিনিতে বলা হয়, সন্ধ্যাবেলা মা লক্ষ্মী পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এই সময়ে বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রদীপ জ্বালানো এবং ভক্তিভরে প্রার্থনা করা অত্যন্ত শুভ। কিন্তু, যদি এই সময় আপনি চুল কাটেন, নখ কাটেন বা কোনও অশুচি কাজ করেন, তবে মা লক্ষ্মী রুষ্ট হন।
- সংসারে অভাব-অনটন নেমে আসে।
- ব্যবসায়ে অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হয়।
- পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়।
- দীর্ঘমেয়াদে ভাগ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
🔮 জ্যোতিষীয় ব্যাখ্যা — চুল ও চক্রের সংযোগ
আমাদের চুলের সাথে মস্তিষ্কের সাতটি প্রধান চক্র বা শক্তিকেন্দ্রের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
- সূর্যাস্তের পর এই চক্রগুলির কম্পন দুর্বল হয়।
- এই সময়ে চুল কাটলে মুকুট চক্র বা সাহস্রার চক্র-এর ভারসাম্য নষ্ট হয়।
- এর ফলে জীবনে অসামঞ্জস্যতা, উদ্বেগ, আর্থিক সমস্যার বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
⚡ বিতর্ক ও বিজ্ঞান — কুসংস্কার নাকি বাস্তবতা?
অনেকেই বলবেন, “এ সবই কুসংস্কার!” কিন্তু বাস্তবিকভাবে, এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে।
- প্রাচীনকালে বিদ্যুৎ ছিল না। সূর্যাস্তের পর অল্প আলোয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল বেশি।
- ধীরে ধীরে এটি শাস্ত্রীয় নিয়মে পরিণত হয় এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য পেয়েছে।
কিন্তু লক্ষণীয়, যদিও আধুনিক যুগে প্রযুক্তি বদলেছে, মহাজাগতিক শক্তির প্রবাহ বদলায়নি। জ্যোতিষ অনুসারে, সন্ধ্যার পরও তামসিক শক্তি সক্রিয় থাকে, যা শরীর ও মনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলে।
🪔 জ্যোতিষী জয়দেব শাস্ত্রীর পরামর্শ
প্রখ্যাত জ্যোতিষী শ্রী জয়দেব শাস্ত্রী বলছেন:
“সন্ধ্যার পরে চুল কাটা, নখ কাটা বা শরীর থেকে কোনও অংশ আলাদা করা বাস্তুশাস্ত্র ও জ্যোতিষশাস্ত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। বিশেষত দুর্গাপুজোর আগে এই নিয়ম না মানলে সংসারে অশান্তি, অর্থসঙ্কট ও স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই দিনের আলোয়, শুভ মুহূর্তে চুল কাটাই শ্রেয়।”
📌 উপসংহার
আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন, সূর্যাস্তের পরে চুল কাটা নিয়ে শাস্ত্রীয় নিষেধাজ্ঞার পিছনে গভীর জ্যোতিষীয় ও আধ্যাত্মিক কারণ রয়েছে।
- সন্ধ্যার সময় ইতিবাচক শক্তি গ্রহণ করুন।
- লক্ষ্মী আরাধনা করুন।
- শরীর ও মনকে সুরক্ষিত রাখুন।
পুজোর আগে ভোল বদলাতে চাইলে, দিনের আলোতেই সেলুনে যান। অন্যথায়, অজান্তেই নিজের ভাগ্যকে চ্যালেঞ্জ করে ফেলছেন! 🌙