বাস্তুশাস্ত্র মতে, আমাদের চারপাশের প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি গাছপালা, এমনকি বাড়ির ভেতর ও বাইরের প্রতিটি স্থাপত্য—সব কিছুরই এক ধরনের শক্তি বা কম্পন রয়েছে। এই শক্তিই নির্ধারণ করে আমাদের জীবনের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রবাহ। তাই কোনো জিনিস, বিশেষ করে গাছপালা, কোথায় স্থাপন করা হচ্ছে, তা আমাদের ভাগ্য ও স্বাস্থ্য—দু’য়ের ওপরই গভীর প্রভাব ফেলে।
এর মধ্যে নিমগাছকে বিশেষভাবে পবিত্র ও শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। নিম শুধু রোগনাশক বা প্রতিষেধক গাছ নয়—এটি শাস্ত্রে দুষ্ট গ্রহনাশক বৃক্ষ হিসেবেও পরিচিত। নিমের উপস্থিতি ঘরের পরিবেশে শুভ শক্তি আনয়ণ করে এবং শনি ও কেতুর মতো কঠোর গ্রহদের কুপ্রভাব অনেকাংশে প্রশমিত করে।
🌿 কোথায় লাগাবেন নিমগাছ?
বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, বাড়ির দক্ষিণ দিক বা পশ্চিম দিক নিমগাছ রোপণের জন্য সবচেয়ে শুভ বলে ধরা হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ দিকে নিমগাছ লাগালে—
- পরিবারের সদস্যদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়,
- ঘরে রোগ-শোক, অকাল মৃত্যু ও অশুভ শক্তির প্রবেশ রোধ হয়,
- অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি ও পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়,
- এবং শনি ও কেতুর কুপ্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
দক্ষিণ দিকটি মঙ্গলের দিক হিসেবেও পরিচিত। নিমগাছের সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের শক্তি একাত্ম, তাই দক্ষিণ কোণে এই গাছ লাগালে মঙ্গলের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং জন্মছকে দুর্বল মঙ্গল শক্তিশালী হয়।
🔮 তান্ত্রিক ও জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী নিমগাছের বিশেষ টোটকা
১. শনির কুপ্রভাব হ্রাসে:
প্রতি শনিবার বা মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, নিমগাছের নীচে কালো তিল, একবেলা রান্না করা ভাত ও সর্ষের তেল সহযোগে প্রদীপ জ্বালান।
তারপর “ওঁ প্রাং প্রীং প্রৌং সঃ শনৈশ্চরায় নমঃ” এই মন্ত্র ২১ বার জপ করুন।
এতে শনিদেব প্রশমিত হন ও কর্মজীবনের বাধা দূর হয়।
২. কেতুর কুপ্রভাব কমাতে:
নিমপাতা, কাঁচা হলুদ ও কুষ্মাণ্ড (পূজা কুমড়ো) একসঙ্গে সিদ্ধ করে তার জল শনিবার সকালে গাছের গোড়ায় ঢেলে দিন।
এটি কেতুর কুগ্রহ শক্তি নাশ করে এবং অজানা ভয়, দুশ্চিন্তা, ব্যর্থতা থেকে মুক্তি দেয়।
৩. দৈনন্দিন স্নান টোটকা:
প্রতিদিন বা অন্তত সপ্তাহে তিন দিন স্নানের জলে সাতটি নিমপাতা ফেলে নিন।
এটি শরীর থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং গ্রহদোষ প্রশমনে সহায়ক হয়।
৪. তান্ত্রিক রক্ষাকবচ তৈরি:
শুক্লপক্ষের মঙ্গলবার, নিমগাছের কাঠ দিয়ে ছোট টুকরো কেটে তা কালো সুতায় গেঁথে গলায় ধারণ করুন।
বিশ্বাস করা হয়, এটি এক ধরনের শনি-কেতু রক্ষাকবচ, যা দুর্ঘটনা, নজরদোষ ও জাদুটোনার প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
৫. ঘরে নিমপাতা রাখার উপায়:
প্রতি অমাবস্যা বা নবচন্দ্র তিথিতে দরজার উপরে পাঁচটি তাজা নিমপাতা বেঁধে রাখলে অশুভ আত্মা বা অদৃশ্য শক্তির প্রভাব কমে।
৬. নিমকাঠের যজ্ঞ:
শনির দোষ প্রশমনে নিমকাঠ দিয়ে যজ্ঞ বা ধুনো দিলে অত্যন্ত শুভ ফল পাওয়া যায়। নিমকাঠ দহন করলে ঘরের নেগেটিভ এনার্জি দূর হয় এবং আধ্যাত্মিক শান্তি বজায় থাকে।
🌕 নিম ও মঙ্গল-কেতুর সংযোগ
শাস্ত্র মতে, নিমগাছ আসলে মঙ্গল গ্রহের রূপান্তরিত শক্তি। এটি একাধারে রোগনাশক ও পাপভয়নাশক। তাই যাঁদের জন্মছকে মঙ্গল দুর্বল, তাঁদের দক্ষিণ কোণে নিমগাছ লাগিয়ে নিয়মিত পূজা ও প্রদীপ জ্বালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
এতে শুধু মঙ্গল শক্তিই বৃদ্ধি পায় না, বরং কেতুর অপ্রত্যাশিত বাধা, হঠাৎ ক্ষতি বা ভয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
🕉️ বিশেষ মন্ত্র উপদেশ
🔸 নিমগাছ পূজার মন্ত্র:
“ওঁ নিম্বরায় নমঃ”
এই মন্ত্র প্রতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১১ বার জপ করলে নিমদেবতার আশীর্বাদ লাভ হয়।
🔸 শনিদেব প্রশমনের মন্ত্র:
“ওঁ শম শনৈশ্চরায় নমঃ”
শনিবার সকালে নিমপাতা হাতে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণ করলে জীবনের কর্মবাধা দূর হয়।
🌺 উপসংহার
নিমগাছ শুধু একটিমাত্র গাছ নয়—এটি এক জীবন্ত শক্তি কেন্দ্র, যা নেগেটিভ এনার্জি শোষণ করে আমাদের চারপাশে ইতিবাচক কম্পন তৈরি করে।
যে বাড়িতে নিমগাছ সঠিক দিক অনুযায়ী রোপিত ও নিয়মিত পূজিত হয়, সেই বাড়িতে শনি, কেতু বা মঙ্গলজনিত বাধা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য, ধন, মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নিমগাছকে ঘরের রক্ষক হিসেবে মানা যায়—একজন নীরব তান্ত্রিক উপচারক হিসেবে।