কার্তিক মাস হিন্দু শাস্ত্রে অত্যন্ত পবিত্র বলে মানা হয়। এই সময় দেবী লক্ষ্মীর করুণা, পুণ্যলাভ, অশুভ শক্তি নাশ এবং পরিবারে শান্তি ফিরে আসে বলে পুরাণসম্মত বিশ্বাস রয়েছে। বিশেষত কার্তিক সংক্রান্তির দিন অনুষ্ঠিত কার্তিকপুজো, শিব–দুর্গার কনিষ্ঠ পুত্র কার্তিকেয় বা স্কন্দের আরাধনা—যা পশ্চিমবঙ্গের কাটোয়া ও বাঁশবেড়িয়ায় বিশেষ জনপ্রিয়।
এই বছর—
📅 ১৭ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার—পালিত হবে কার্তিকপুজো।
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, এদিন নির্দিষ্ট কিছু টোটকা ও পূজা-নিয়ম পালন করলে—
✨ সন্তানলাভের যোগ বৃদ্ধি,
✨ বাড়িতে শ্রীবৃদ্ধি,
✨ দাম্পত্যে সৌহার্দ্য,
✨ শিক্ষায় সাফল্য
এবং
✨ আকস্মিক অর্থপ্রাপ্তির আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
নীচে তুলে ধরা হল কার্তিকপুজোর সবচেয়ে শুভ ও কার্যকর টোটকা, যা প্রাচীন আচার, লোকবিশ্বাস ও জ্যোতিষ–বাস্তুর সমন্বয়ে গঠিত।
🔱 কার্তিকপুজোর পবিত্র টোটকা ও বিধি—জ্যোতিষশাস্ত্রের দৃষ্টিতে
১) নববিবাহিত দম্পতির জন্য ‘কার্তিক ঠাকুর ফেলা’ অত্যন্ত শুভ
কার্তিকপুজোর অন্যতম বিস্ময়কর প্রথা হল—
🌼 নবদম্পতির বাড়ির দরজায় কার্তিকের প্রতিমা লুকিয়ে রেখে যাওয়া।
লোকবিশ্বাস বলে, কার্তিককে সন্তানরূপে গ্রহণ করলে সেই দম্পতির জীবনে কার্তিক-সুলভ সন্তানলাভের আশীর্বাদ আসে—সুন্দর, গুণবান ও সৌভাগ্যময়।
এই মূর্তি পাওয়া গেলে কোনও অবস্থাতেই রাগ করা বা ফেরত দেওয়া উচিত নয়।
বরং—
🙏 স্নেহভরে ঘরে এনে পবিত্র নিয়মে পূজা করলে দাম্পত্য সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়।
২) কার্তিক ঠাকুরকে পায়েসের ভোগ নিবেদন – অর্থভাগ্যের চাবিকাঠি
শাস্ত্র মতে, দুধ, চাল, গুড় ও এলাচের সংমিশ্রণে তৈরি পায়েস হচ্ছে শুক্র ও চন্দ্রগ্রহের শুভকারক ভোগ।
কার্তিককে পায়েস নিবেদন করলে—
💰 অর্থভাগ্য বৃদ্ধি,
🏡 গৃহে সম্পদের স্থায়িত্ব
এবং
🌙 মনোকামনা পূরণের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৩) শিশুর খেলনা, জামা, পাঁচ ধরনের ফল ও পাঁচ রকম মিষ্টি দান—অপূর্ব ফলদায়ী
যদি নিজের ঘরে পুজো না থাকে, তাহলে যে বাড়িতে পুজো হয় সেখানে নৈবেদ্য সামগ্রী দান করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।
বিশেষত—
🎁 পাঁচটি গোটা ফল,
🍬 পাঁচ রকম মিষ্টি,
👕 নতুন জামা
এবং
🧸 ছোটদের খেলনা—
এই পাঁচ ‘পঞ্চশুভ’ দান বৃহস্পতি ও চন্দ্রের শুভফল বাড়ায়, যা জীবনের স্থিতি ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি করে।
৪) সন্তানদের শিক্ষায় সাফল্য আনতে ময়ূরের পালক টোটকা
কার্তিক ঠাকুরের পাশে পঞ্চমেয়ূর-পুচ্ছ রেখে পুজো করলে—
📚 বুধগ্রহ শক্তিশালী হয়
এবং
🧠 শিশুর কনসেন্ট্রেশন, স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পায়।
পুজো শেষে ময়ূরের পালক সন্তানের পড়ার জায়গায় রাখলে—
✨ পড়াশোনায় অদৃশ্য বাধা দূর হয়।
৫) কার্তিকপুজোর দিনে তুলসী আরাধনা—অশুভ শক্তি নাশ ও শ্রীবৃদ্ধির প্রতীক
সকালে তুলসীর পূজা এবং সন্ধ্যায় তুলসীমঞ্চে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো—বাস্তুশাস্ত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী শুভসংকেত।
এটি—
🌿 নেগেটিভ এনার্জি দূর করে
🪔 বাড়ির দেবদোষ নাশ করে
💰 অর্থপ্রবাহ স্থিতিশীল রাখে।
৬) প্রসাদ প্রথমে বাড়ির বাচ্চাদের—পবিত্র আশীর্বাদের সূচনা
কার্তিকপুজোর প্রসাদ প্রথমে শিশুদের হাতে দিলে—
🌸 গ্রহগত অশুভতা দূর হয়
🌟 তাদের সৌভাগ্যবৃদ্ধি ঘটে
এবং
🏡 বাড়িতে ‘শিশুমঙ্গল’ স্থাপিত হয়, যা সম্পূর্ণ পরিবারের জন্য অত্যন্ত শুভ।
৭) স্বামী–স্ত্রীর একত্রে পূজায় অংশগ্রহণ—দাম্পত্যে ঐশ্বর্যের যোগ
এদিন দম্পতির একসঙ্গে পুজোয় অংশ নেওয়া
❤️ সম্পর্কের রাগ–দ্বেষ দূর করে
🌺 বৈবাহিক শান্তি দৃঢ় করে
এবং
💍 গৃহে শ্রী–ঐশ্বর্যের স্থায়িত্ব আনে।
জ্যোতিষ মতে, এই সম্মিলিত পূজা শুক্রগ্রহকে শক্তিশালী করে—যা প্রেম, সমৃদ্ধি ও দাম্পত্যের রক্ষক।
🌼 কার্তিকপুজো—জ্যোতিষশাস্ত্রে কেন এত ফলদায়ী?
কার্তিক মাসে—
• সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে
• চন্দ্র উৎকর্ষে
• মঙ্গল নিজভূমিতে অবস্থান করেন।
এই গ্রহসংযোগ—
🔥 বাধা নাশ,
🔥 পাপকর্ম দোষশান্তি,
🔥 সন্তানের মঙ্গল
এবং
🔥 অশুভ শক্তি দমন
করতে অত্যন্ত শক্তিশালী বলে মানা হয়।
🌙 উপসংহার
শুধু নিয়মমাফিক কার্তিকপুজো করলেই নয়—
✦ ভক্তি,
✦ স্নেহ,
✦ নিষ্ঠা
ও
✦ পবিত্র মনোভাব
থাকলে কার্তিক ঠাকুরের কৃপায় জীবনে আশ্চর্য সৌভাগ্য, সন্তানমঙ্গল, এবং অর্থভাগ্যের উজ্জ্বল দ্বার খুলে যায়।