শনি মহাদশা: অদৃশ্য শাস্তি নাকি আত্মশুদ্ধির সময়কাল?
শনি গ্রহকে বলা হয় বিচারকের গ্রহ—তিনি যে শুধুই কষ্ট দেন, তা কিন্তু নয়। বরং তিনি কর্মফলের ধারক। যাঁরা ভালো কাজ করেন, তাঁদের পুরস্কার দেন; আর যাঁরা ভুল পথে হাঁটেন, তাঁদের জীবনসংকট এনে শিক্ষা দেন।
কিন্তু শনি যখন মহাদশায় প্রবেশ করেন, তখন জীবনে একের পর এক সংকট, আর্থিক ক্ষতি, মানসিক অস্থিরতা, কর্মহীনতা বা সম্পর্কের ভাঙন দেখা দেয়। এমনকি গৃহদেবতাও যেন রুষ্ট হয়ে ওঠেন। তবে চিন্তার কিছু নেই—তন্ত্র, জ্যোতিষ এবং আধ্যাত্মিক নিয়মে এমন কিছু উপায় আছে, যা নিয়ম করে পালন করলে শনির কুদৃষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১. শনিবার কালী মন্দিরে সরষের তেল নিবেদন করুন
শনির দিন অর্থাৎ শনিবার সূর্যোদয়ের পর নিকটস্থ কালী মন্দিরে যান। একটি পিতলের পাত্রে কালো তিল ও সরষের তেল নিয়ে মাতাকে নিবেদন করুন এবং বলুন—
🔸 মন্ত্র (বাংলা উচ্চারণে)
“ওঁ শম শনিশ্চরায় নমঃ।”
এই পদ্ধতিটি আপনার ঋণভার, কর্মব্যাঘাত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব কমাতে বিশেষ কার্যকর।
২. শ্মশানে বা বটগাছের তলায় পিপঁড়েদের জন্য মিষ্টি তিল দান করুন
শনির সঙ্গে যুক্ত আত্মিক শক্তিগুলি বিশেষভাবে ‘বটগাছ’ ও শ্মশান-সংলগ্ন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে। আপনি যদি শনিবার ভোরবেলা বটগাছের তলায় তিল ও গুড় মিশিয়ে পিপঁড়েদের দান করেন, তাহলে শনি গ্রহের অশুভ প্রভাব অনেকটাই প্রশমিত হয়।
তান্ত্রিক ব্যাখ্যা:
পিপঁড়েদের খাওয়ানো মানে মহাজাগতিক সৃষ্টিশক্তিকে খুশি করা, কারণ তারা ‘পঞ্চতত্ত্ব’-এর প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত।
৩. ‘নীলম’ রত্ন ধারণের পূর্বে করুন তান্ত্রিক শুদ্ধিকরণ
শনি গ্রহের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী রত্ন হল নীলম (Blue Sapphire)। কিন্তু সবাই এই রত্ন ধারণ করতে পারেন না। আগে সাতদিন ধরে ‘নীলম’ জলপাত্রে ডুবিয়ে রাখুন এবং প্রতি রাতে এই মন্ত্র পাঠ করুন—
🔹 মন্ত্র (বাংলা উচ্চারণে)
“ওঁ নীলাঞ্জন সমাভাসং রবিদ্বিজ সনিভ্যম।”
তারপর শনিবার দিন শনির বিগ্রহের সামনে বসে নীলম ধারণ করুন। শুদ্ধ তান্ত্রিক পদ্ধতিতে করলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই উন্নতি টের পাবেন।
৪. ৪৯ দিন ধরে “শনিবার প্রদীপ তন্ত্র” পালন করুন
শনিবার সূর্যাস্তের পর একটি লৌহের পাত্রে সরষের তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালান। সেই প্রদীপে কালো তিল, রুদ্রাক্ষ, ও একটি ছোট লোহা (কী বা পেরেক) ফেলে দিন।
প্রদীপ জ্বালিয়ে এই মন্ত্র পাঠ করুন:
🔸 মন্ত্র (বাংলা উচ্চারণে)
“ওঁ প্রাং প্রীং প্রৌং সঃ শনিশ্চরায় নমঃ।”
এটি ৪৯ দিন পর্যন্ত নিয়ম করে করলে শনির কঠোর পরীক্ষা ধীরে ধীরে নরম হয়ে আসে।
৫. গরিব বা কর্মহীন ব্রাহ্মণকে কালো চাদর ও ছাতা দান করুন
শনি একজন কর্মদাতা গ্রহ। তাই কর্মহীনদের সহায়তা করলে বা যাঁরা প্রকৃত অভাবগ্রস্ত, তাঁদের সাহায্য করলে শনি প্রসন্ন হন।
শনিবার আপনি যদি কোনও ব্রাহ্মণ বা বৃদ্ধ গরিবকে একটি কালো বা নীল চাদর, ছাতা ও লোহা-ধাতুর কোনও বস্তু দান করেন, তবে আপনার জীবনের বহু বন্ধদ্বার খুলে যাবে।
সংক্ষিপ্ত তান্ত্রিক টোটকা:
- পকেটে একটি ছোট লৌহপিণ্ড রাখুন (শনির ধাতু)
- শনিবার ‘শনি চালিসা’ পাঠ করুন
- পাঁকাল মাছের মাথায় তিল মাখিয়ে জলাশয়ে ছেড়ে দিন
- শনির ‘দশম গ্রহ তত্ত্ব’ অনুযায়ী জলের ঘড়ায় একটি নীল পাথর রাখুন ঘরে
শেষ কথা:
শনি কখনও কারও শত্রু নন—তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা এক শিক্ষক, যিনি আপনার ভুল শুধরাতে আসেন। তাঁর মহাদশা আসলে একটি পরীক্ষা—যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে প্রয়োজন সহ্য, আত্মবিশ্বাস এবং নিয়মিত আধ্যাত্মিক অনুশীলন। উপরের এই পাঁচটি গোপন তন্ত্র-জ্যোতিষভিত্তিক উপায় আপনাকে এই সময় পার করতে সাহায্য করবে।
ভাগ্য পরিবর্তন আপনার হাতেই। নিয়ম মেনে চলুন, গ্রহও আপনাকে সম্মান দেবে।
– এশিয়ান টপ ১০ জ্যোতিষাচার্য শ্রী জয়দেব শাস্ত্রী