এই গ্রহদোষগুলি থেকে পরিত্রাণ পেতে হাজার বছর আগে থেকেই এক বিশেষ বিজ্ঞান বিকশিত হয়েছে — সেটাই হলো "রত্নতত্ত্ব"।
এখানে ব্যবহৃত রত্নগুলি শুধুই অলংকার নয় — এগুলিকে বলা হয় "জ্যোতিষ রত্ন" বা "অ্যাস্ট্রোলজিকাল জেমস্টোনস"। এই রত্নগুলি প্রতিটি গ্রহের নির্দিষ্ট কম্পন বা তরঙ্গের প্রতিফলক। রত্ন শরীরে ধারণ করলে, তার থেকে নির্গত কম্পনদৈর্ঘ্য সংশ্লিষ্ট গ্রহের শক্তিকে সক্রিয় বা প্রশমিত করে। ফলত, জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়।
জ্যোতিষ অনুসারে, মোট ৯টি প্রধান গ্রহ এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ৯টি রত্নকে বলা হয় “নবরত্ন”। প্রতিটি রত্নের রয়েছে এক একটি শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই—
🔱 রাহু গ্রহের রত্ন: গোমেদ (Hessonite Garnet)
রাহু হল ছায়া গ্রহ, এর প্রভাব অদৃশ্য হলেও তীব্র। রাহুর কুপ্রভাবে মানুষ অকারণে আতঙ্কিত হয়, মানসিক অস্থিরতা, বিচারহীনতা, জটিল সম্পর্ক, মাদকাসক্তি ও হঠাৎ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়।
গোমেদ ধারণ করলে এই সব নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত হয়। এটি ধ্যান, শারীরিক শক্তি ও মানসিক স্থিরতা বাড়ায়। পরিধানের জন্য শনিবার, মধ্যম আঙুল ও রূপার আংটি সর্বাধিক উপযোগী।
🪓 শনিগ্রহের রত্ন: নীলম (Blue Sapphire)
শনি ধৈর্য, কর্মফল ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। কিন্তু জন্মছকে শনি অশুভস্থানে থাকলে তা কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থতা, বিলম্ব, হতাশা, আইনি জটিলতা ও দীর্ঘ রোগের কারণ হতে পারে।
নীল নীলম একটি অত্যন্ত শক্তিশালী রত্ন, যা শনির প্রভাব প্রশমিত করে। এটি দ্রুত কাজ করে—তাই ব্যবহার শুরুর আগে তিনদিন পরীক্ষা করে নিতে হয়। শুধুমাত্র জ্যোতিষীর পরামর্শে, শনিবার দিনে রূপা বা লোহায় কনিষ্ঠা আঙুলে ধারণ করতে হয়। ভুল ব্যবহারে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
☀️ সূর্যগ্রহের রত্ন: রুবি (Manikya)
সূর্য আত্মা, আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বের প্রতীক। সূর্য দুর্বল হলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়, পিতৃ-সমস্যা দেখা দেয়, সুনাম নষ্ট হয়।
রুবি রত্ন জীবনের অন্ধকার দূর করে, নেতৃত্ব ও খ্যাতি এনে দেয়। রবিবার দিনে সোনার আংটিতে, অনামিকা আঙুলে ধারণ উপযুক্ত। তবে হীরের সঙ্গে কখনওই রুবি পরা উচিত নয়, এতে শক্তির সংঘর্ষ ঘটে।
🌙 চন্দ্রগ্রহের রত্ন: মুক্তো (Pearl)
চাঁদ মন, মা, অনুভূতি ও মানসিক স্থিতির প্রতীক। দুর্বল চাঁদ থাকলে মানসিক উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, অশান্তি, মা-সন্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়।
মুক্তো ধারণ করলে মানসিক শান্তি আসে, ইনসোমনিয়া বা দুঃস্বপ্ন দূর হয়। এটি সোমবারে রূপার আংটিতে কনিষ্ঠা আঙুলে পরা হয়। তবে এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল রত্ন, সহ্য না হলে মানসিক অবসাদ আরও বাড়তে পারে।
🔥 মঙ্গলগ্রহের রত্ন: প্রবাল (Red Coral)
মঙ্গল সাহস, যৌবন, রক্তচাপ, ও কর্মশক্তির প্রতীক। দুর্বল মঙ্গল মানে রক্তজনিত সমস্যা, গরম মেজাজ, দাম্পত্য কলহ।
প্রবাল ধারণ করলে শারীরিক শক্তি ও মেজাজের ভারসাম্য বজায় থাকে। এটি মঙ্গলবার, সোনার আংটিতে অনামিকা আঙুলে ধারণ করা শ্রেয়। এটি মাঙ্গলিক দোষও হ্রাস করে।
📗 বুধগ্রহের রত্ন: পান্না (Emerald)
বুধ যুক্তিবুদ্ধি, কথাবার্তা, ব্যবসা ও প্রযুক্তির প্রতীক। বুধ দুর্বল থাকলে স্মৃতিভ্রংশ, কণ্ঠজ সমস্যা, আর্থিক গন্ডগোল হয়।
পান্না স্মৃতি, বুদ্ধি ও আর্থিক সিদ্ধান্তে সাহায্য করে। এটি বুধবারে, সোনার আংটিতে অনামিকা বা কনিষ্ঠা আঙুলে ধারণ করতে হয়। তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত জেদি হয়ে পড়ে—তখন সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলতে হয়।
📙 বৃহস্পতি গ্রহের রত্ন: হলুদ পোখরাজ (Yellow Sapphire)
বৃহস্পতি জ্ঞান, ধর্ম, শিক্ষাগুরু ও শুভকার্যের প্রতীক। দুর্বল থাকলে শিক্ষাক্ষেত্রে বাধা, বিয়েতে বিলম্ব ও আধ্যাত্মিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
হলুদ পোখরাজ জীবনে গুরুর কৃপা এনে দেয়, উচ্চশিক্ষা ও বিয়েতে সহায়তা করে। এটি বৃহস্পতিবার, সোনার আংটিতে ডান হাতের তর্জনীতে ধারণ করতে হয়।
💎 শুক্রগ্রহের রত্ন: হিরে (Diamond)
শুক্র প্রেম, বিলাসিতা, সংস্কৃতি ও ভোগের প্রতীক। শুক্র দুর্বল হলে সম্পর্ক ভেঙে যায়, ব্যভিচার বা মায়াজালে জড়ানো দেখা যায়।
হিরে প্রেমে সাফল্য, আর্থিক সুযোগ ও রুচি বাড়ায়। শুক্রবার, প্ল্যাটিনাম বা রূপার আংটিতে মধ্যমা আঙুলে ধারণ করা হয়। কিন্তু এটি খুব সংবেদনশীল—সহ্য না হলে রত্ন খুলে ফেলা উচিত।
👁️ কেতুগ্রহের রত্ন: ক্যাট’স আই (Lehsunia)
কেতু মোক্ষ, অতীন্দ্রিয় শক্তি ও ত্যাগের প্রতীক। কেতুর কুপ্রভাবে দুর্ঘটনা, হঠাৎ ক্ষতি, রহস্যজনক অসুখ হতে পারে।
ক্যাট’স আই আত্মিক শক্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে। মঙ্গলবার বা বৃহস্পতিবার, রূপার আংটিতে অনামিকা আঙুলে ধারণ করলে ভালো ফল মেলে। এটি বিশেষ করে তান্ত্রিক ও সাধনাভিত্তিক জীবনের জন্য উপযোগী।
🔎 রত্ন ধারণের গোপন নিয়ম:
- সব রত্ন ধারণের আগে ৩-৫ দিন ট্রায়াল করে সহ্যক্ষমতা যাচাই করুন।
- গঙ্গাজল, দুধ ও কাঁচা মধু দিয়ে শুদ্ধ করে ধারণ করুন।
- প্রতিটি রত্ন নির্দিষ্ট দিনের, ধাতুর ও আঙুলে ধারণ করতে হয়।
- ভুল রত্ন বা ভুল দিনে ধারণ বিপর্যয় আনতে পারে।
রত্ন ধারণ শুধুই বাহ্যিক অলংকার নয়—এ এক প্রাচীন বৈজ্ঞানিক চর্চা। দেহ, মন ও আত্মার উপর এই রত্নের তরঙ্গ এক গভীর প্রভাব ফেলে। কিন্তু প্রতিটি রত্নের শক্তি ভিন্ন এবং সেই শক্তির ব্যবহারও অভিজ্ঞ হাতে হওয়া উচিত। তাই রত্ন ধারণের আগে জন্মছক বিশ্লেষণ ও জ্যোতিষ পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
Sri Joydeb Sastri | Asian Top 10 Astrologer
JD Astro Consultancy and Academy