🕉️ নীলপূজার মাহাত্ম্য কী?
নীলপূজা বা নীলষষ্ঠী হল নীলকণ্ঠ শিব ও নীলাবতী পার্বতীর সম্মিলিত আরাধনা।
এই দিনে মহিলারা উপবাস থেকে সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্তানদের দীর্ঘায়ু, সুখ ও সফল জীবনের জন্য প্রার্থনা করেন।
নীলষষ্ঠী পালিত হয় চৈত্র সংক্রান্তির ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ চড়কের পূর্ণ প্রস্তুতির আবহে। লোকসংস্কৃতি, পূজা, ব্রত ও গ্রামীণ আচার-অনুষ্ঠান একাকার হয়ে ওঠে।
📅 এই বছরে কবে পড়ছে নীলষষ্ঠী?
🔹 তারিখ: ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ (৩০ চৈত্র, রবিবার)
🔹 তিথি: প্রতিপদ তিথি
🔹 দিনভর ব্রতের আমেজ এবং সন্ধ্যায় আরতি ও প্রদীপ দান করা হয়।
⏰ শুভ মুহূর্ত (Panchang Details):
📿 বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে—
🔸 প্রতিপদ তিথি শুরু: ভোর ৫:৫২ মিনিট
🔸 অমৃতযোগ: সকাল ৬:১৩ – ৯:৩২, সন্ধ্যা ৭:২৫ – ৮:৫৬
🔸 মাহেন্দ্রযোগ:
- সকাল ৬:১২ পর্যন্ত
- দুপুর ১২:৫৩ – ১:৪২
- সন্ধ্যা ৬:৩৯ – ৭:২৪
- রাত ১২:০১ – ৩:০৪
📿 গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুসারে—
🔸 প্রতিপদ তিথি অহোরাত্রি অর্থাৎ সারাদিন বজায় থাকবে।
🌸 এই দিনে কী করবেন?
✅ উপবাস পালন করুন (যতটুকু সম্ভব)
✅ শিব ও পার্বতী মূর্তির সামনে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালান
✅ সন্তানদের নাম করে প্রার্থনা করুন
✅ শিবলিঙ্গে জল/দুধ ঢালুন এবং "ওং নমঃ শিবায়" জপ করুন
✅ সন্ধ্যায় বাটিতে ঘি-প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্তানদের নাম উচ্চারণ করে আরতি দিন
🌿 নীলপূজার মাহাত্ম্য – বিশ্বাস, আত্মত্যাগ ও মাতৃত্বের প্রতীক 🌿
নীলষষ্ঠী ব্রত হল একাধারে আধ্যাত্মিকতা, মাতৃত্ব এবং লোকঐতিহ্যের এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন। এই ব্রতের মূল উদ্দেশ্য হল সন্তানদের জীবনভর মঙ্গল, রোগমুক্তি এবং সাফল্য কামনা করা।
এটি শুধুমাত্র একটি উপবাস নয়, এটি একজন মা’র নিজের সব ক্লান্তি, কষ্ট উপেক্ষা করে প্রার্থনায় ডুবে যাওয়ার দিন।
🕉️ কেন বলা হয় “নীল” পূজা?
এই ব্রতের সঙ্গে যুক্ত আছেন নীলকণ্ঠ শিব।
পুরাণ মতে, সমুদ্র মন্থনের সময় যখন কালকূট বিষ বেরিয়েছিল, তখন বিশ্ব রক্ষায় মহাদেব তা পান করেন। তাঁর কণ্ঠনীল হয়ে যায়, তাই তিনি “নীলকণ্ঠ” নামে পরিচিত হন।
এই নীল রঙ— বিষ ও ত্যাগের প্রতীক। তাই এই পূজাকে বলা হয় নীলপূজা।
🌸 মাতৃরূপে পার্বতী ও সন্তানের মঙ্গল:
শিবের পাশে থাকেন মা পার্বতী— যিনি নিজেই শক্তিরূপা।
তাঁকে নীলাবতী রূপে পূজা করা হয়, যিনি সন্তানের রক্ষাকারিণী।
এই দিন মহিলারা মনে করেন, মা পার্বতীর আশীর্বাদ থাকলে সন্তান সব দুঃখ-কষ্ট থেকে রক্ষা পাবে।
💫 লোকাচার ও সংস্কৃতি:
নীলষষ্ঠী বাংলার এক অন্তর আত্মার উৎসব। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়—
🔸 এটি একটি সামাজিক মিলনের দিন
🔸 পরিবারের সকলের জন্য আশীর্বাদ কামনার সময়
🔸 গ্রামীণ বাংলায় এই দিনটিতে শিব-মঙ্গল গীত গাওয়া হয়,
🔸 মেয়েরা পরিধান করেন নতুন শাড়ি ও সিঁদুর দিয়ে পূর্ণ সাজে অংশগ্রহণ করেন।
🧘 এই ব্রতের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
🔹 শিবের মতন ত্যাগ ও ধৈর্যের আদর্শ
🔹 মায়ের নিরন্তর প্রার্থনা সন্তানের জন্য
🔹 কর্মফল, আত্মিক পবিত্রতা ও বিশ্বাসের অনুশীলন
🔹 শুদ্ধ আত্মা, বিনয়, সংযম এবং পরিবারকেন্দ্রিক ভাবনা
🌺 নীলপূজার ফল কী হয় বলে বিশ্বাস?
🔱 সন্তানদের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য
🔱 পরিবারে কল্যাণ ও সুখ-সমৃদ্ধি
🔱 কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া
🔱 মানসিক শান্তি ও আত্মিক উন্নতি
🙏 বিশেষ উপদেশ:
নীলষষ্ঠীর দিন সন্তানদের কপালে চন্দনের টিপ ও আশীর্বাদ দিন। আপনার বিশ্বাসই তাঁদের আত্মরক্ষার ঢাল হয়ে উঠুক।
📌 এই পোস্টটি শেয়ার করুন যাতে আরও মায়েরা জানতে পারেন এই শুভ ব্রতের মাহাত্ম্য ও সঠিক সময়!