বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ শুরু হয়েছে ১৫ই এপ্রিল ২০২৫, পয়লা বৈশাখের মাধ্যমে। নতুন বছরের সূচনার কিছুদিনের মধ্যেই হাজির হচ্ছে এক বিশেষ তিথি — বৈশাখ অমাবস্যা, যা এই বছরের প্রথম অমাবস্যা। শুধু ধর্মীয় নয়, জ্যোতিষশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিক দিক থেকেও এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ব্লগে আমরা জানব —
👉 বৈশাখ অমাবস্যা ২০২৫-এর তারিখ ও সময়
👉 এর ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
👉 কীভাবে পালন করবেন পূজা
👉 এবং কীভাবে এই দিন কালসর্প দোষ মুক্তির জন্য শুভ হতে পারে
📅 বৈশাখ অমাবস্যা ২০২৫: তারিখ ও সময়
- অমাবস্যা তিথি শুরু: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, সকাল ৪:৪৯ মিনিটে
- তিথি শেষ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, রাত ১:০০ মিনিটে
এই সময়কাল জুড়ে পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা ভারতজুড়ে পালিত হবে বৈশাখ অমাবস্যা।
🌼 অমাবস্যা তিথির ধর্মীয় তাৎপর্য
অমাবস্যা তিথি হিন্দু ধর্মে পূর্বপুরুষদের স্মরণে বিশেষ দিন। এই তিথিতে আত্মিক শুদ্ধি, তর্পণ, পিণ্ডদান এবং উপবাস পালন করা হয়।
বৈশাখ অমাবস্যা যেহেতু বাংলা নববর্ষের প্রথম অমাবস্যা, তাই এটি একটি নতুন সূচনার প্রতীক। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে সঠিক নিয়মে পূজা ও উপবাস পালন করলে জীবনে বাধা-বিপত্তি দূর হয়ে আসে।
🕉️ পূজা ও রীতিনীতি
১. তর্পণ ও পিণ্ডদান
পবিত্র নদী বা জলাশয়ে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পণ করা হয়।
২. শিব ও কালী পূজা
এই দিনে অনেকেই মহাকাল বা মা কালীর আরাধনা করে। রাত্রিকালীন পূজা বিশেষ ফলপ্রদ।
৩. উপবাস ও দান
উপবাস পালন, গরীবকে খাদ্য ও বস্ত্র দান করা — এগুলো পুণ্য সঞ্চয়ের উপায়।
৪. গঙ্গাজল ছিটানো ও ধূপধুনো
বাড়ি ও আশপাশের স্থান পবিত্র করতে গঙ্গাজল ছিটানো এবং ধূপ জ্বালানো হয়।
🐍 কালসর্প দোষ থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ সুযোগ
কালসর্প দোষ হল এমন একটি জ্যোতিষিক দোষ, যেখানে রাহু ও কেতুর মাঝে সব গ্রহ আটকে যায়। এর ফলে জীবনে নানা বাধা, মানসিক অস্থিরতা ও বারবার ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়।
বৈশাখ অমাবস্যা এই দোষ নিবারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন?
- 🌑 অমাবস্যা তিথিতে রাহু-কেতু শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় এদের সন্তুষ্ট করতে উপযুক্ত সময়।
- 🕉️ নাগদেবতা পূজা ও ‘কালসর্প দোষ নিবারণ মন্ত্র’ পাঠ করলে শারীরিক ও মানসিক ভার লাঘব হয়।
- 🐍 শিবলিঙ্গে দুধ, জল, কুশ, ও বিল্বপত্র নিবেদন করে উপবাসসহ পূজা করলে ধীরে ধীরে দোষ দূর হয়।
- 🌊 পবিত্র নদীতে তর্পণ ও স্নান — এটি রাহু-কেতুর কু-প্রভাব নাশ করে এবং পিতৃঋণ পরিশোধে সাহায্য করে।
যারা দীর্ঘদিন ধরে কর্মক্ষেত্র, স্বাস্থ্য বা পারিবারিক জীবনে সমস্যা অনুভব করছেন, তাদের জন্য এই তিথি এক মোক্ষম সুযোগ।
বৈশাখ অমাবস্যা ২০২৫ শুধুমাত্র একটি পূর্ণিমা-বিহীন দিন নয়, বরং এটি এক আত্মিক বিশুদ্ধির, পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের এবং জ্যোতিষিক ভাবে বাধা কাটিয়ে ওঠার মহাসময়।
নিয়মমাফিক পূজা, তর্পণ ও উপবাস পালন করলে জীবনে শান্তি, সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি আসবেই — এমনটাই বিশ্বাস করা হয়।
শুভ বৈশাখ অমাবস্যা!
আত্মিক শান্তি ও রাহু-কেতুর কৃপা বর্ষিত হোক আপনার জীবনে। 🌑🕉️🐍