এটি মূলত জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার রথযাত্রার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষঙ্গ। এই দিনে উড়িষ্যার পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দিরে দেবতাদের ১০৮টি পবিত্র জলপাত্র দিয়ে স্নান করানো হয়। স্নান শেষে তাঁদের সাজানো হয় ‘গজবেশে’ — যা হাতির মতো সাজসজ্জা।
কবে শুরু ও কখন শেষ হবে পূর্ণিমা তিথি?
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে, পূর্ণিমা তিথি শুরু হচ্ছে ১০ জুন, মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৩৭ মিনিটে এবং শেষ হবে ১১ জুন, বুধবার দুপুর ১টা ১৪ মিনিটে। এই সময়ের মধ্যেই দেবস্নান, পূজা ও দান করা শ্রেয়।
ঘরোয়া পূজার নিয়ম কী কী?
যাঁরা বাড়িতে পূজা করবেন, তাঁদের জন্য কিছু সহজ নিয়ম দেওয়া হলো:
- সকালবেলা গঙ্গাস্নান: সূর্যোদয়ের সময় গঙ্গায় বা পবিত্র জলে স্নান করুন।
- পরিষ্কার বা নতুন পোশাক: পূজার সময় পরিষ্কার বা নতুন কাপড় পরা উচিত।
- মূর্তি স্নান করান: ঘরে থাকলে জগন্নাথদেবের মূর্তিকে গঙ্গাজল, দুধ, মধু, ঘি, চন্দন ও কেশরের মিশ্রণে স্নান করান।
- হলুদ মিষ্টি নিবেদন: হলুদ রঙের মিষ্টি যেমন পায়েস বা সন্দেশ অর্ঘ্য দিন।
- দান করুন: গরিব শিশু বা জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন ভক্তদের কিছু দান করুন।
- নিরামিষ ও উপবাস: যতটা সম্ভব নিরামিষ খাওয়াদাওয়া করুন, কেউ কেউ উপবাসও পালন করেন।
ধর্মীয় গুরুত্ব ও আচার
পুরাণ অনুসারে, এই স্নানযাত্রার প্রবর্তক ছিলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। স্নানের পর ১৫ দিনের জন্য দেবতারা বিশ্রামে যান, যাকে বলে ‘অনবসর কাল’। এর পরে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত রথযাত্রা।
চলতি বছরের পরামর্শ
- পুরী বা শহরের বড় বড় জগন্নাথ মন্দিরগুলিতে ভিড় বাড়বে, তাই ভোর থেকে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ জারি থাকবে।
- জল ও ছাতা সঙ্গে রাখুন, কারণ আবহাওয়ায় তাপ ও আর্দ্রতা থাকবে বেশি।
- পরিবেশবান্ধব প্রসাদ ও দান সামগ্রী ব্যবহার করুন — প্লাস্টিক নয়, কাপড় বা পাতা ব্যবহার করুন।
উপসংহার
দেব স্নান পূর্ণিমা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি ভক্তি ও শুদ্ধির এক পবিত্র আয়োজন। যারা আন্তরিকতা ও নিয়ম মেনে এই দিন পালন করেন, তাঁদের জীবনে মঙ্গল, সুস্বাস্থ্য ও মানসিক শান্তি বজায় থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়।
নিচে দেব স্নান পূর্ণিমা (১১ জুন ২০২৫) উপলক্ষে কিছু বিশেষ তন্ত্রশাস্ত্র ভিত্তিক কার্যকর টোটকা ও অনুশীলন (Tantra Based Totka Rituals) দেওয়া হলো, যা সংসারিক শান্তি, বাধা নাশ, স্বাস্থ্য এবং কর্ম উন্নতির জন্য অত্যন্ত ফলদায়ী:
“জলতন্ত্র অভিষেক” টোটকা (Tantric Water Ritual)
- উপকরণ: গঙ্গাজল, কেশর, চন্দন, তুলসী পাতা, কাঁচা দুধ
- পদ্ধতি: ভোরে সূর্যোদয়ের আগে এই মিশ্রণে একটি রুদ্রাক্ষ বা শালগ্রাম শিলা স্নান করান।
- মন্ত্র: “ওঁ ক্রীং কালিকায় নমঃ” ২১ বার জপ করুন।
- ফল: গৃহস্থ জীবনে শান্তি ও রোগমুক্তি।
“গজবেশ শক্তি সঞ্চালন” টোটকা (Elephant Form Energy Transfer)
- পদ্ধতি: গজবেশ বা হাতির আকৃতির একটি হলুদ রঙের চিত্র মাটির বা কাপড়ের উপর আঁকুন।
-
এটি জগন্নাথের সামনে রেখে ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করুন:
"হে গজবেশ, আমার সমস্ত বাধা হরণ করুন" - ফল: কর্মক্ষেত্র ও জীবনে জমে থাকা বাধা দূর হয়।
“চম্পা পুষ্প তন্ত্র” টোটকা (Tantra Using Champa Flower)
- উপকরণ: ৫টি চম্পা ফুল, সিঁদুর, ধূপ
- পদ্ধতি: সন্ধ্যায় ৫টি চম্পা ফুলে সিঁদুর ছিটিয়ে জগন্নাথ দেবের পায়ে অর্ঘ্য দিন।
- মন্ত্র: “ওঁ হ্রিং গ্লৌং জগন্নাথায় নমঃ” ১১ বার জপ করুন।
- ফল: সংসারে সৌভাগ্য ও দাম্পত্যে মাধুর্য বৃদ্ধি পায়।
“পীত দীপ দান” তন্ত্র টোটকা (Yellow Lamp Ritual)
- পদ্ধতি: একটি কাঁচের বা পিতলের প্রদীপে ঘি ও হলুদ সুতলি দিয়ে দীপ জ্বালিয়ে ৯ বার ঘরের প্রতিটি কোণে ঘোরান।
- মন্ত্র: “ওঁ শ্রিং শ্রীয়ে নমঃ”
- ফল: আর্থিক উন্নতি, বাড়িতে লক্ষ্মী প্রবেশ।
“তুলসী ও রুদ্রাক্ষ সংযুক্ত তাবিজ” টোটকা
- পদ্ধতি: একটি ছোট রুদ্রাক্ষ ও ৫টি শুকনো তুলসী পাতা হলুদ কাপড়ে মুড়ে, কালো সুতো দিয়ে ডান হাতে বেঁধে নিন।
- ফল: কু-দৃষ্টি, ব্ল্যাক ম্যাজিক বা নজর দূর হবে। আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
“তান্ত্রিক নীল প্রদীপ টোটকা” (Tantric Blue Flame Remedy)
- পদ্ধতি: নীল কাচের বা রঙ করা প্রদীপে সরিষার তেল দিয়ে সন্ধ্যায় দক্ষিণমুখী হয়ে শনি ও রাহু গ্রহের শান্তির জন্য জ্বালান।
- মন্ত্র: “ওঁ রাঁ রাহবে নমঃ” ও “ওঁ শনৈশ্চরায় নমঃ”
- ফল: চাকরি, ব্যবসা বা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বাধা দূর হয়।
✨ বিশেষ টিপস:
- এই দিনে বিষ্ণু সহ যেকোনো ত্রিদেব বা মা কালীকে উদ্দেশ করে যজ্ঞ বা হোম করলেও শক্তিশালী ফল পাওয়া যায়।
- তান্ত্রিক ক্রিয়ায় সততা ও নিয়মানুবর্তিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজের ক্ষমতা অনুযায়ীই ক্রিয়া করুন।
আপনি চাইলে রাশিফল অনুযায়ী ব্যক্তিগত তান্ত্রিক টোটকাও জানাতে পারেন – আমি বিশ্লেষণ করে বলব।
🔔 মনে রাখবেন, দেবস্নান পূর্ণিমা হল আত্মশুদ্ধি ও শক্তি আহরণের দিন — তন্ত্র তার গোপন পথ।