Skip to Content

আপনি কি ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগছেন? এই অভ্যাসগুলো মেনে চলুন আর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান!

সুপার অভ্যাসেই ঠান্ডা ইউরিক অ্যাসিড!  চোখে জল আনা যন্ত্রণা কমবে ম্যাজিকের মতো!
12 মার্চ, 2025 by
আপনি কি ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগছেন? এই অভ্যাসগুলো মেনে চলুন আর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান!
Joydev Sastri

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং নিয়ন্ত্রণের উপায়

বর্তমান সময়ে অনেক মানুষই উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড বা হাইপারউরিসেমিয়া সমস্যার শিকার হচ্ছেন। এটি শুধুমাত্র জয়েন্টের ব্যথা বা গাউটের কারণ নয়, বরং এটি কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে কিডনিতে পাথর, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। অথচ আমরা যদি একটু সচেতন হই এবং আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করি, তাহলে সহজেই এই সমস্যাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজকের এই পোস্টে আমরা উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার এবং নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে বিশদ আলোচনা করব।

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড কী এবং কেন এটি বিপজ্জনক?

আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। এটি একটি রাসায়নিক উপাদান যা পিউরিন নামে পরিচিত প্রোটিনের বিপাকক্রিয়ার ফলে তৈরি হয়। সাধারণত, ইউরিক অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যদি শরীর অত্যধিক পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে বা কিডনি যদি এটি সঠিকভাবে বের করতে না পারে, তাহলে রক্তে এর মাত্রা বেড়ে যায়, যা হাইপারউরিসেমিয়া নামে পরিচিত।

এই অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীরে জমতে শুরু করে এবং গাউট (Gout) নামক আর্থ্রাইটিসের কারণ হতে পারে, যেখানে জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিডের স্ফটিক জমে প্রচণ্ড ব্যথা, ফোলাভাব এবং লালচে ভাব তৈরি হয়।

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের কারণসমূহ

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু প্রধান কারণ হলো—

১. খাদ্যাভ্যাস

  • উচ্চমাত্রার পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার (লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ, অর্গান মিট, ডাল, মাশরুম ইত্যাদি) গ্রহণ করলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, ফ্রাইড ফুড, এবং প্রসেসড ফুড ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে তোলে।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও সফট ড্রিংকস ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে।

২. জীবনধারা ও ওজন

  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও স্থূলতা ইউরিক অ্যাসিড বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা ও ব্যায়ামের অভাব এটি বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

৩. কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস

  • যদি কিডনি সঠিকভাবে ইউরিক অ্যাসিড বের করতে না পারে, তাহলে এটি রক্তে জমতে থাকে।
  • ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এবং কিডনির রোগ থাকলে ইউরিক অ্যাসিড বেশি হয়।

৪. কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ

  • উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে।
  • ডায়ুরেটিক (Diuretic) ওষুধ ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি করতে পারে।

৫. জেনেটিক কারণ

  • যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকে, তাহলে আপনারও এই ঝুঁকি থাকতে পারে।

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের লক্ষণ

যদি আপনার শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তবে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে—

গাঁটে ব্যথা ও ফোলা: বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙুল, হাঁটু, গোড়ালি, এবং কব্জিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

জয়েন্ট লাল হয়ে যাওয়া ও উষ্ণ অনুভূতি: এটি গাউটের প্রধান লক্ষণ।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও কিডনিতে পাথর: বেশি ইউরিক অ্যাসিড কিডনিতে জমে পাথর তৈরি করতে পারে।

শরীর ক্লান্ত লাগা ও দুর্বলতা অনুভব করা।

ত্বকে চুলকানি ও র‍্যাশ দেখা দেওয়া।

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

১. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন

🔹 পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন:

  • লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ, অর্গান মিট, মাশরুম, ডাল কম পরিমাণে খান।
    🔹 ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খান:
  • শসা, গাজর, বিট, বাঁধাকপি, লাউ, পালং শাক ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
    🔹 পানি বেশি পান করুন:
  • দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কিডনি ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দিতে পারবে।

২. ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন

🔹 প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করুন।

🔹 ওজন বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করুন, কারণ স্থূলতা ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।

৩. কিছু ঘরোয়া প্রতিকার

আমলকি: প্রতিদিন এক গ্লাস আমলকি জুস পান করুন, এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়।

লেবু পানি: লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

অলিভ অয়েল ও বাদাম তেল: রান্নার সময় এই তেল ব্যবহার করলে ইউরিক অ্যাসিড কমতে পারে।

৪. চিকিৎসা ও পরামর্শ

🔹 প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করুন: ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ৭ mg/dL এর বেশি হলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে।

🔹 ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণ করুন।

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

ভুল: ইউরিক অ্যাসিড শুধু বৃদ্ধ বয়সে হয়।

সত্য: এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে, এমনকি তরুণদের মধ্যেও।

ভুল: শুধু মাছ-মাংস খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে।

সত্য: অনেক প্রাকৃতিক খাবারও (ডাল, মাশরুম) পিউরিন সমৃদ্ধ, যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে।

ভুল: শুধু ওষুধ খেলেই এটি কমবে।

সত্য: খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তন করলেই এটি সবচেয়ে ভালো নিয়ন্ত্রণে আসে।

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড একটি সাধারণ কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কত? আপনি কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করেন? কমেন্টে জানান! 😊💬

আপনি কি ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগছেন? এই অভ্যাসগুলো মেনে চলুন আর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান!
Joydev Sastri 12 মার্চ, 2025
Share this post
Tags
Archive