আপনার ঠাকুরঘর কি সঠিকভাবে সাজানো? জেনে নিন বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী সেরা নিয়মগুলি!
ঠাকুরঘর আমাদের বাড়ির সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এটি শুধু উপাসনার জায়গা নয়, বরং সঠিকভাবে ঠাকুরঘর সাজালে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় এবং অশুভ শক্তি দূর হয়। বাস্তুশাস্ত্র মতে, কিছু নিয়ম মেনে ঠাকুরঘর তৈরি ও সাজালে তা ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পারিবারিক জীবনেও সুখ ও শান্তি বজায় থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে ঠাকুরঘর সাজালে তা আরও শুভফল দেবে।
ঠাকুরঘরের সঠিক দিক কোনটি হওয়া উচিত?
বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী ঠাকুরঘর স্থাপনের সঠিক দিক খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঠাকুরঘর বসানোর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়মগুলি মেনে চলা উচিত—
✅ উত্তর-পূর্ব দিক: এটি ঠাকুরঘরের জন্য সর্বোত্তম স্থান। এই দিককে ঈশ্বরের দিক বলা হয় এবং এটি শুভ শক্তিকে আকর্ষণ করে।
✅ পূর্ব দিক: উত্তর-পূর্ব দিক সম্ভব না হলে, পূর্ব দিকে ঠাকুরঘর বানানো যেতে পারে। এটি সূর্যের শক্তিকে আকর্ষণ করে যা বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি নিয়ে আসে।
❌ দক্ষিণ দিক: এই দিকে ঠাকুরঘর রাখা উচিত নয়, কারণ এটি নেগেটিভ এনার্জি তৈরি করতে পারে।
❌ বেডরুম বা রান্নাঘরে ঠাকুরঘর নয়: বাস্তুশাস্ত্র মতে, ঠাকুরঘর কখনোই বেডরুম বা রান্নাঘরে রাখা উচিত নয়। এতে পরিবারে সমস্যা ও অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
ঠাকুরঘরে প্রদীপ রাখার সঠিক নিয়ম
ঠাকুরঘরে প্রদীপ জ্বালানোর সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন—
🔥 প্রদীপের মুখ পূর্ব বা দক্ষিণ দিকে রাখতে হবে।
🔥 প্রদীপ কখনও মাটিতে না রাখা উচিত, বরং একটি কাঠ বা পিতলের আসনে রাখতে হবে।
🔥 সন্ধ্যা এবং সকালে প্রতিদিন প্রদীপ জ্বালানো উচিত, এতে ঘরে শুভ শক্তি বজায় থাকে।
🔥 যদি সম্ভব হয়, ঘিয়ের প্রদীপ ব্যবহার করুন, কারণ এটি ঘরে পবিত্রতা বৃদ্ধি করে এবং নেগেটিভ এনার্জি দূর করে।
ঠাকুরঘরের প্রবেশদ্বার কেমন হওয়া উচিত?
ঠাকুরঘরের দরজা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান দিয়েই শুভশক্তির প্রবেশ ঘটে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হল—
🚪 ঠাকুরঘরের দরজা লোহার না হয়ে কাঠের হওয়া উচিত।
🚪 দরজা এমনভাবে বানানো উচিত, যাতে এটি নিজে থেকে বন্ধ না হয়ে যায়।
🚪 দরজা দিয়ে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস আসা দরকার, এতে ঘর পবিত্র ও ইতিবাচক শক্তি দ্বারা ভরে থাকবে।
দেব-দেবীর ছবি ও মূর্তি রাখার সঠিক নিয়ম
ঠাকুরঘরে মূর্তি বা ছবি রাখার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি—
🛕 মূর্তির উচ্চতা ২ ইঞ্চি থেকে ৯ ইঞ্চির মধ্যে হওয়া উচিত।
🛕 অতিরিক্ত বড় বা খুব ছোট মূর্তি রাখা উচিত নয়, কারণ এটি নেগেটিভ এনার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
🛕 মূর্তি বা ছবি কখনও উত্তর বা পশ্চিম দিকে রাখা উচিত নয়।
🛕 একই দেবতার একাধিক রূপের মূর্তি একসঙ্গে রাখা ঠিক নয়।
🛕 দেব-দেবীর মূর্তি বা ছবি দেওয়ালের সঙ্গে ঠেকিয়ে রাখা উচিত নয়। কিছুটা দূরে রেখে স্থাপন করলে শুভফল পাওয়া যাবে।
🛕 দুইটি দেবমূর্তি মুখোমুখি রাখা উচিত নয়, কারণ এতে পরিবারের মধ্যে মতভেদ ও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ঠাকুরঘরের রঙ কেমন হওয়া উচিত?
ঠাকুরঘরের জন্য উপযুক্ত রং নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রঙের প্রভাব আমাদের মন ও পরিবেশের উপর পড়ে। সঠিক রং ঘরে ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মানসিক শান্তি আনে। নিচে কিছু সেরা রং দেওয়া হল—
🎨 সাদা – পবিত্রতা ও শুদ্ধতার প্রতীক।
🎨 হালকা নীল – মানসিক প্রশান্তি ও ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে।
🎨 হালকা হলুদ – শুভশক্তি ও আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
❌ গাঢ় রঙ যেমন কালো, লাল বা ধূসর একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়।
ঠাকুরঘরে কী কী রাখা উচিত নয়?
❌ ভাঙা বা ফাটা মূর্তি ঠাকুরঘরে রাখা একদম উচিত নয়।
❌ মৃত আত্মীয়ের ছবি ঠাকুরঘরে রাখা ঠিক নয়।
❌ পুরোনো বা নষ্ট প্রসাদ দীর্ঘদিন ঠাকুরঘরে রেখে দেওয়া উচিত নয়।
❌ অতিরিক্ত জিনিসপত্র বা অপ্রয়োজনীয় বস্তু ঠাকুরঘরে জমিয়ে রাখা উচিত নয়, এতে ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ বাধা পায়।
ঠাকুরঘর পরিষ্কার রাখার নিয়ম
✅ ঠাকুরঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত।
✅ প্রতিদিন ঠাকুরঘরে ধূপ বা আগরবাতি জ্বালানো শুভ।
✅ সপ্তাহে অন্তত একবার ঠাকুরঘরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে পবিত্র করা উচিত।
✅ মূর্তিগুলি মাঝে মাঝে পরিষ্কার করা উচিত, যাতে ধুলা না জমে।
উপসংহার
সঠিক নিয়ম মেনে ঠাকুরঘর তৈরি করলে তা পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি বজায় রাখে। বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী, ঠাকুরঘরের দিক, রঙ, দরজা, মূর্তি স্থাপন ও অন্যান্য নিয়ম মেনে চললে ঘরে শুভশক্তির প্রবাহ ঘটে এবং অশুভ শক্তি দূর হয়। এই নিয়মগুলি অনুসরণ করে আপনার ঠাকুরঘরকে আরও পবিত্র এবং শুভশক্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলুন!
আপনার ঠাকুরঘর কি সঠিক নিয়ম মেনে সাজানো? আপনার মতামত বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না! 😊